মাগুরছড়া ট্রাজেডির ২৫ বছর: ক্ষতির তালিকা প্রকাশ ও ক্ষতিপুরণ আদায়ের দাবি

 



নিউজ ডেস্কঃ জাতীয় সম্পদ রক্ষা ও মাগুরছড়া গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষয়ক্ষতি আদায়, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশসহ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দেয়ার দাবিতে কমলগঞ্জে মানববন্ধন করা হয়েছে।

১৪ জুন মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বরে পরিবেশবাদী সংগঠন পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটিএর উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে ৫ দফা দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

পাহাড় রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি মোনায়েম খানের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক নির্মল এস পলাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে সুজন কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সম্পাদক প্রভাষক রাবেয়া খাতুন, প্রভাষক সেলিম আহমদ চৌধুরী, কমলকুঁড়ি সম্পাদক পিন্টু দেবনাথ প্রমুখ।

এ সময় বক্তরা বলেন, মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাতে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে গ্যাস বিস্ফোরিত হয়। তখন আগুনে পুড়ে গ্যাস, চা বাগান, বনাঞ্চল, রেলপথ, সড়কপথসহ আশপাশের ঘড় বাড়ি। মারাত্মক ক্ষতি হয় পরিবেশের। কিন্তু আজো ক্ষতিপুরন আদায় করা সম্ভব হয়নি। অবিলম্বে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে ক্ষতিপুরন আদায় করতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানানো হয় মানববন্ধন থেকে। বক্তারা আরো বলেন, কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাস কূপে বিষ্ফোরণের ২৫ বছর পূর্তিতেও এখনও বন পরিবেশ প্রকৃতির কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি মার্কিন বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানী অক্সিডেন্টাল, ইউনিকল বা শেভরন। বন পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য, রেলপথ ও সড়ক পথের ক্ষতি পূরণে আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের এই দিনে মার্কিন তেল কোম্পানি অক্সিডেন্টাল এর কামখেয়ালীপনায় বিষ্ফোরণ ঘটে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাগুরছড়া গ্যাস কুপে। অগ্নিকান্ডে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় লাউয়াছড়া বনের গাছপালা, চা বাগান পান পুঞ্জি, উড়ে যায় দুটি ব্রীজ, পাকা সড়ক। গলে যায় রেলওয়ে লাইন।

দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গভীর বন ও এর সাহচার্যে থাকা বিপুল সংখ্যক জীববৈচিত্র্য। ক্ষতির মুখোমুখি হয় রেল ও সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইনসহ এই অঞ্চলের অসংখ্য স্থাপনা। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মার্কিন গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বন বিভাগ। পূর্ণ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইউনিকলের কাছে হস্তান্তরের পর সর্বশেষ শেভরনের কাছে বিক্রি হয়েছে এই গ্যাসক্ষেত্র।

শেভরন ২০০৮ সালে ওই বনে ত্রি-মাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে। এতেও স্থানীয়ভাবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১২ সালে শেভরন মৌলভীবাজার ১৪নং ব্লকের অধীনে নূরজাহান, ফুলবাড়ি এবং জাগছড়া চা বাগানের সবুজ বেষ্টনী কেটে কূপ খননের পর এসব কূপ থেকে চা বাগানের ভেতর দিয়ে ড্রেন খনন করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে উত্তোলিত গ্যাস কালাছড়ার মাধ্যমে রশীদপুর গ্রিডে স্থানান্তর করছে।

পরিবেশ সংরক্ষণবাদীদের তথ্য মতে, সেসময় বিস্ফোরণে ৬৩ প্রজাতির পশু-পাখির বিনাশ হয়। সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ১৬৩ দিন বন্ধ থাকে। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা। মার্কিন অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও বন বিভাগ কোনো ক্ষতিপুরণ পায়নি। ফিরে আসেনি এখনো প্রাকৃতিক বনের স্বাভাবিক পরিবেশ।

Post a Comment

Previous Post Next Post