নিউজ ডেস্কঃ মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ছবির মেয়েটির নাম লিপা আক্তার নিপা। দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় পর বেরিয়ে এলো নিপা হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান এই ঘটনা নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রথমে নিপার মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হলেও পরবর্তীতে তার মা কোহিনুর বেগম নরসিংদী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে নৌ-পুলিশ তদন্ত করলেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় পর বেরিয়ে আসে নিপা হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
পিবিআই জানায়, বিয়ের পরে পুরনো প্রেমিক আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিরুলের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ হয় নিপার। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে নিপা গর্ভবতী হয়ে পড়লে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেন নিপা। একদিন রাতে বিয়ের কথা বলে নিপাকে ঘর থেকে নিয়ে যায় আমিরুল। মেঘনা নদীর মাঝে নৌকায় নিপাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদীতে। আমিরুলসহ এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন মোট সাতজন। এরমধ্যে আমিরুলের বন্ধু সুজন মিয়া ও চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পিবিআই। প্রধান আসামি আমিরুল পলাতক আছেন আর বাকি চারজন বর্তমানে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন।
এসপি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আমিরুলের সঙ্গে নিপার দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমিরুলের বাবা তাদের সম্পর্ক মেনে নেননি বরং নিপার বাবাকে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে দিতে সহায়তা করেন। সেখানে নিপা এক বছর সংসার করার পর সেখানে তার একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
একপর্যায়ে আমিরুল নিপার স্বামীকে তাদের অতীত প্রেমের বিষয়ে বলেন। এতে নিপার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে নিপাকে সন্তানসহ বাবার বাড়িতে রেখে আসেন। এরমধ্যে নিপার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে ফেলেন এবং নিপার সঙ্গে আমিরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক পর্যায়ে নিপা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। আমিনুল নিপার বাচ্চাটি নষ্ট করার জন্য ডাক্তারের কাছে যায়। তবে ডাক্তার জানান, এই পর্যায়ে গর্ভপাত সম্ভব নয়।
পরে আমিরুলকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন নিপা। এরমধ্যে আমিরুল অন্য সহযোগীদের নিয়ে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী গত বছরের ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর নিপাকে বিয়ের কথা বলে নৌকাযোগে মেঘনা নদীতে নিয়ে যায়। মাঝ নদীতে নিয়ে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং কাঠ দিয়ে এলোপাথারি পিটিয়ে নিপার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, নিপাকে হত্যার পর চরের কোথাও লাশটি চাপা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু নদীর সবদিকে জেলেদের উপস্থিতি থাকায় উপায় না দেখে নিপার মরদেহটি নদীতে ভাসিয়ে দেয় তারা। হত্যায় ব্যবহৃত গামছা ও তাদের সঙ্গে থাকা কোদাল নদীতে ফেলে দেয়। এমনকি নৌকাটিও অন্যত্র বিক্রি করে দেয় তারা। পরে নৌকাটিকে আলামত হিসেবে সংগ্রহ করতে পেরেছে পিবিআই।
পরে ভাসমান মরদেহটি ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমান মফিদুলের সহায়তায় মরদেহটি দাফন করা হয়।