নিউজ ডেস্কঃ কমলগঞ্জ উপজেলার চৈত্রঘাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান (৩৫) দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত ভাড়া করা মাইক্রোবাসটি জব্দ ও এর চালক আমির হোসেন ওরপে হীরা (৪০)কে আটক করেছে পুলিশ।
নিহত ব্যবসায়ী নেতার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সিলেটে থেকে ১ নভেম্বর সোমবার বিকেলে মরদেহ চৈত্রঘাট বাজারে আনা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লীর উপস্থিতিতে চৈত্রঘাট বাজারে মরহুমের নামাজের জানাযা শেষে চৈত্রঘাট বাজার সংলগ্ন স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। এ হত্যার ঘটনায় সোমবার কমলগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চৈত্রঘাট এলাকায় প্রভাবশালী দুপক্ষের মধ্যে ধলাই নদীর বালু উত্তোলন ও বাজারের দোকান নিয়ে এলাকাটি দুটি দলে বিভক্ত। বালুমহাল দখল নিয়ে গত দেড় মাসে রহিমপুর ইউনিয়নে দুটি পক্ষের মধ্যে তিনবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও থানায় মামলা হয়েছে। কিছুদিন আগে নাজমুল এবারের নির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে অংশ নেবে বলে এলাকায় ঘোষণা দেন। পূর্বের বিরোধ ও নির্বাচনের প্রার্থীতা নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের ধারণা।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একটি মাইক্রোবাসযোগে এসে দুর্বৃত্তরা রোববার দুপুর ২ ঘটিকায় চৈত্রঘাট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও রহিমপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের বাসার সম্মুখে নাজমুল হাসানকে পাশে পেয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত জখম করে দ্রুত পালিয়ে যায় দুবৃত্তরা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মৌলভীবাজার সদও হাসপাতাল ও পরে দ্রুত সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সন্ধ্যা ৭ টায় চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। নিহত নাজমুল রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামের লুকুছ মিয়ার ছেলে। মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর চৈত্রঘাট বাজার এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। বিক্ষোব্দ জনতা একই এলাকার প্রতিপক্ষ জুয়েল আহমদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
ব্যবসায়ী নেতার মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় পৌঁছলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানার নেতৃত্বে একদল পুলিশ চৈত্রঘাট বাজারে অবস্থান নেয়। এ ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ ও এর চালক মৌলভীবাজার সদও উপজেলার বাসিন্দা আমির হোসেন ওরপে হীরা (৪০)কে সোমবার ভোর রাতে আটক করেছে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
নিহত নাজমুল হাসান আগামী ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আহতাবস্থায় নাজমুল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ইউপি সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ায় তার ওপর হামলা হয়েছে। নিহত নাজমুল রহিমপুর ইউনিয়নের প্রতাপী গ্রামের লুকুছ মিয়ার ছেলে। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে মাইক্রোবাসে বসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডিতে একটি লাইভে নাজমুল হাসান তার ওপর হামলায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করেন। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে প্রার্থীতা ঘোষণার কারণেই তার ওপর হামলা হয়েছে বলে জানান। ভিডিওতে তিনি ছুরিকাঘাতের সময় তোফায়েল, রাসেল, মাসুদ, তফজ্জুল নামে চারজনকে চিনতে পেরেছেন এবং অন্যদের চিনতে পারেননি বলে জানান।
রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আজির উদ্দীন মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রতাপী গ্রামের জুয়েল আহমদ গংদের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুরসহ নানা বিষয় নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা সোমবার বিকেলে বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় আনা মাইক্রোবাসটি ভাড়া করা হয়েছিল। আটক চালক জানিয়েছেন, হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে নামার পর তাঁকে পাশে কোথাও থেকে চা খেতে বলেছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি দেখেন, মাইক্রোবাসের যাত্রীরা একজনকে কোপাচ্ছেন। এরপর তিনি খালি মাইক্রোবাস নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যান। তিনি আরও বলেন, চৈত্রঘাট বাজারটি সিসিটিভি টিভির আওতাভুক্ত। তাই তদন্তের জন্য ফুটেজ দেখা হবে। ওই চারজনকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।