স্বপ্নে বিভোর বাঙালি, স্বপ্ন আগলে রাখতে শিখুক



নৌমি: আধো রাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়, মনে পড়ে মোরে প্রিয়, চাঁদ হয়ে রবো আকাশের গায়, বাতায়ন খুলে দিও.....

কঠিন বাস্তবতা। বহুবার স্বপ্ন দেখেছে বাঙালি, ভেঙে হয়েছে কয়েক টুকরো, কখনো মাঝরাতে কখনোবা ভোররাতে। তারপর খোলা আকাশের নির্লিপ্ত চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকা, স্বপ্নকে খুঁজে ফেরা। এইতো সাফের মঞ্চে স্বপ্নভঙ্গের ঘা এখনো দগদগে। বুকের ভেতর কি যেন পুড়তে থাকে নিঃশব্দে! রাতে এপাশ ওপাশ করে ভোর হয়ে আসে, ঘুম আর আসেনা। এর মধ্যেই আবার নতুন স্বপ্ন দেখার তাড়না! এরা বাঙালি, এরা স্বপ্নেই বাঁচে।

আবারও একটা বিশ্বমঞ্চ তৈরি। নিজেদের এগিয়ে নেবার সুযোগ, কিছু একটা দেখিয়ে দেবার যা দেখানো হয়নি আগে। কেবল তো ফরম্যাট বদলেছে। তাইতো আমাদের ক্লান্ত স্বপ্নঘোড়া মালদ্বীপ থেকে ছুটে এসেছে আরব আমিরাতে। দ্রুত শ্বাস পড়ছে তবুও দৃষ্টি নিবদ্ধ, এবার যে ক্রিকেট! তাও আবার ধুমধার টি-টুয়েন্টি। এই টুয়েন্টি-টুয়েন্টি লড়াই আজও টাইগারদের পোষ মানেনি। বহুবার থাবায় থাবায় দিয়েছে ক্ষত। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের মঞ্চে বুকে দিয়েছিল মরণ কামড়। আমরাও তো টাইগার! ধীরে ধীরে নিজেদের তৈরি করছে বিশ্বমঞ্চের জন্য। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ! লড়াই এবার ফিরে পাবার, ফিরিয়ে দেবার। স্বপ্নও বড় কিছু নয়, ছোট ছোট প্রাপ্তি জমা হোক এই বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপ পূর্বপ্রস্তুতিতে ভালো খারাপ দুই অভিজ্ঞতাই আছে। স্বপ্নের মতো সময় পেরিয়েছে টাইগাররা। ঘরের মাঠে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পাড়ার রাঘব বোয়ালদের। তবে মরুর বুকে এসব হিসাব নিকাশ কতটা কার্যকর হবে তাই দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরে চড়া আত্মবিশ্বাসে কিছুটা হলেও টোকা লেগেছে। মিরপুরের পিচে যারা টপাটপ 

উইকেট তুলেছে মুড়ি মুড়কির মতো, ওমানে তারা ঘাম ঝড়িয়েছে একটি উইকেটের জন্য। এছাড়াও ওপেনার সমস্যা তো লেগেই আছে। টি-টুয়েন্টি দর্শকদের নিখাদ বিনোদনের জায়গা। তাই বিশ্বকাপে স্পোর্টিং উইকেট হওয়াই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মরুর বুকে বাংলাদেশের জন্য ভালো পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে।

তবে ব্যপারটা টি-টুয়েন্টি বলে স্বপ্নকে ঝেড়ে মুছে নতুন করে সাজানোই যায়। এই বিশ ওভার যে গিরগিটি সম, ক্ষনে ক্ষনে রং বদলায়। একটা বলই হয়তো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। নিজের দিনে যে কেউই হয়ে উঠতে পারে তুরুপের তাস।

তাইতো রেশমী সুতোয় বেঁধে খুব যত্ন করে কোটি বাঙালির স্বপ্নকে তুলে দেওয়া হলো মাহমুদুল্লাহ বাহীনির হাতে। চাওয়া একটাই আমাদের স্বপ্ন যেন থাকে দুধে ভাতে।

স্বপ্নে বা আকাঙ্ক্ষায় সীমা রেখা টেনে দিতে আমরা জানি। দিন শেষে এও বুঝতে হয় দলের সামর্থ্য কতটুকু। এই সামর্থ্যে যে হুঙ্কার দিতে জানে টাইগাররা তা তো কারো অজানা নয়। সমর্থকদের চাওয়া সবশেষ কিছু ভালো করে, সম্মান নিয়ে, মাথা উঁচু করে দেশে ফিরে আসুক টাইগাররা। যেন কেউ  ফিসফাস না করে সস্তা পিচের তিন অবস্থা।

স্বপ্নযাত্রায় টাইগারদের জন্য আরো একটি পাওয়া হলো মরুর দেশে অসংখ্য স্বদেশী সমর্থন পাওয়া। ওখানকার প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশের দ্বাদশ শক্তি হয়ে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবে। তাইতো খুব করে চাই, খুব করে চাই মরুর বুকে লাল সবুজের বৃষ্টি নামুক। প্রাপ্তির আনন্দ এসে আছলে পড়ুক আমাদের বঙ্গোপসাগরে বুকে। আমাদের আগামী প্রজন্মের ঘুম পাড়ানী গল্পের সৃষ্টি হোক এই মঞ্চ থেকে।

আর নয় শেষ করবো সেই স্বপ্ন দিয়ে। বাঙালি স্বপ্ন দেখে, সে স্বপ্ন দেখায় যতটা না অভ্যস্ত তার চেয়ে বেশি অভ্যস্ত স্বপ্ন ভাঙতে দেখায়। দিন শেষে স্বপ্ন ভঙ্গের বোঝা কাঁধে নিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে, ব্যাপার না...হয় এরকম...হয়। তবে এরা বাঙালি, এরা স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখে। তাইতো টুর্নামেন্ট জুরে চোখে স্বপ্ন নিয়ে এরা তাকিয়ে থাকবে তাদের প্রতিনিধি এগারো জনের দিকে।

এমারসন বলে গিয়েছেন," পথ যেদিকে নিয়ে যায় সেদিকেই যেও না, যেদিকে কোনো পথ নেই, সেদিকে হাঁটো এবং নিজের চিহ্ন রেখে যাও।" ভালো করুক ওরা।। 

Post a Comment

Previous Post Next Post