নাইট কুইন; রানীর মতো সৌন্দর্য

 


নিউজ ডেস্কঃ রাতের অন্ধকারে নাইট কুইন শুভ্র সাদা সৌরভ ও মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। আর এ কারনে অনেকে আবার এ ফুলকে নিশীতের রাণী বলে ডাকেন। রাত যত গভীর হয় নাইট কুইন তার পাপড়ী তত প্রস্ফুটিত করে। আবার ভোর হওয়ার সাথে সাথে এই ফুলের পাপড়ি আবার ছোট হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক আজকের পত্রিকার কুলাউড়া প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক সীমান্তের ডাকের বার্তা সম্পাদক কুলাউড়া থানা রোডের বাসিন্দা এস আলম সুমনের বাসার ছাদ বাগানে একাধিক গাছে একই সাথে প্রায় ত্রিশটি ‘নাইট কুইন’ ফুল ফুটে। প্রতি বছরে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নাইট কুইন গাছে একাধিক বার ফুল ফুটে।



নাইট কুইন একটি দুর্লভ ফুল। অনেক সাধনা করে, অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনে ফোটাতে হয় নাইট কুইন। কিন্তু তাও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। যে রাতে ফুটে সে রাতেই ঝরে পড়ে। ফুলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি গন্ধেও অতুলনীয়। সাদা রং এর ফুলের ভেতর ঘিয়ে রং এর আবরণ ও সুমিষ্ট গন্ধ নাইট কুইনকে দিয়েছে রাজকীয় চেহারা। এজন্য নাইট কুইন ফুলকে রাতের রাণী বলা হয়।



নাইট কুইনের বৈজ্ঞানিক নাম Epiphyllum oxypetalum এবং ইংরেজিতে Dutchman's pipe ও queen of the night নামে পরিচিত। বিরল ক্যাকটাস জাতীয় এ ফুলটির আদি নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল এবং মেক্সিকো হলেও এখন বাংলাদেশের অনেক পুষ্পপ্রেমির বাড়িতে এ ফুল শোভা পায়।
এই ফুলের বৈশিষ্ট অন্যান্য যেকোনো ফুলের তুলনায় একটু আলাদা। বছরের মাত্র একদিনে এবং রাতের কোনো এক সময় ফোটাই এর স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। নাইট কুইন নিজেকে আত্মপ্রকাশ ও বিকশিত করে রাতেই এবং সেই রাতের অন্ধকারেই হয় তার জীবনাবসান। এর ফলে ফুলটিকে সচরাচর দেখা যায় না। তাছাড়া চারা থেকে ফুলটি ফুটতে সময় নেয় তিন-চার বছরেরও বেশী। বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষায় ফোটে।



নাইট কুইন ফুলের আর একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো এ ফুলের গাছ পাথরকুচি গাছের মতো পাতা থেকে অঙ্কুরিত হয়। একটি পাতা নরম মাটিতে রেখে দিলে ধীরে ধীরে সে পাতা থেকে অঙ্কুর বের হয় এবং পরে তা গাছে পরিণত হয়। একটি পাতা থেকে একাধিক গাছ জন্মাতে পারে। পাতা থেকে শুধু নাইট কুইন ফুলের গাছই জন্মায় না, সেই পাতা থেকেই প্রস্ফুটিত হয় অসাধারণ নাইট কুইন ফুল। প্রথমে পাতার যে কোনো দিকে ছোট একটি গুটির মতো বের হয়। এই গুটি আস্তে আস্তে বড় হয়। ১৪ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সেই গুটি কলিতে রূপান্তরিত হয়। আর কলি পুষ্ট হওয়ার পর যে রাতে ফুল ফুটবে সেদিন বিকালেই কলিটি অদ্ভুত সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে। তখন এর দিকে তাকালে খুব সহজেই বোঝা যায় রাতের রাণী আসছে। পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেলে আস্তে আস্তে পাপড়ি মেলতে শুরু করে নাইট কুইনের কলি। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটি দুটি করে পাপড়ি মেলতে থাকে। সেই সঙ্গে মিষ্টি এক ধরনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এ গন্ধে তীব্রতা না থাকলেও আছে এক ধরনের অদ্ভুত মাদকতা, যা যে কোনো মানুষকে মোহিত করার জন্য যথেষ্ট। পরিপূর্ণ অন্ধকার যখন রাতকে আনন্দিত করে নাইট কুইন তখন অন্ধকারের বুক চিরে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মেলে ধরে। রাত যত বাড়তে থাকে তার রূপ ততই খুলতে থাকে। পূর্ব আকাশে আলোকছটা দেখা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে মৃত্যু ঘণ্টা বেজে ওঠে নাইট কুইনের। কারণ রাতের রানী দিনের আলো সইতে পারে না।


Post a Comment

Previous Post Next Post