প্রতি সপ্তাহের শেষে নিজের শরীর কাটতাম: ফারহান

 



আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুই সহোদর মিলে খুন করেন নানি, ভাই ও বাবা-মাকে। এরপর নিজেরাও আত্মহননের পথ বেছে নেন।

এমন লোমহর্ষক ও বিভৎস ঘটনায় তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহর। 

ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ নামের দুই সহোদর মিলে প্রথমে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে পরিবারের চার সদস্যকে। এরপর তারা দুজনেও আত্মহত্যা করেন।

কেন এমনটা করলেন দুই দুই সহোদর তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, মানসিক বিষণ্নতার চরমমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তারা। একপর্যায়ে এ কাণ্ড ঘটায় তারা।

হত্যাকাণ্ডের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেন। 

তার বিষণ্নতা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই নোটে ফুটে উঠেছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্যও উন্মোচন হয়। ফারহান নোটের শিরোনাম দিয়েছে - ‘পরিবারের সবাইকে হত্যার পর আমি আত্মহত্যা করলাম।’

পাঠকের জন্য  সেই ‘সুইসাইড নোট’ -এর  প্রথম পর্ব দেওয়া গেল- 

‘যদি মারা যাই, তাহলে হয়ত আমি কিছুটা নজর কাড়ব। সারাজীবন যে চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মোকাবিলা করে এসেছি, আমি সেগুলো প্রকাশ করতে যাচ্ছি। কে জানে, হয়ত ভালো কোনো ফল আসতে পারে। যারা জানেন না, তাদের উদ্দেশে বলছি-  আমি নবম শ্রেণি (২০১৬) থেকে বিষণ্নতায় ভুগতাম। প্রথমবার নিজের দেহ নিজের কাটার কথা মনে পড়ছে। এটা ছিল ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। আমি এই কাজটি করেছিলাম শিল্পকর্মের কাঁচি দিয়ে। তবে কাঁচি এতটাই ভোঁতা ছিল যে, এটা হাত কাটার চেয়ে চামড়ায় ঘষা খাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আমার চামড়া কাটল। কয়েকটি কাটা দাগের পর যন্ত্রণা কমা শুরু হলো।

এই অনুভূতির প্রতি আসক্ত হতে বেশি সময় লাগল না। দুর্ভাগ্যবশত ছোটদের জন্য তৈরি করা কাঁচিগুলো মাংস কাটার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই, আমাকে ছুরির দিকে ঝুঁকতে হলো। রান্নাঘর থেকে এটা নেওয়া ছিল অনেক সহজ। এগুলো ভোঁতা ছিল, কিন্তু অনেক ভালো কাজ করত।

প্রথম দিকে আমি প্রত্যেক সপ্তাহ শেষে কাটতাম। কিন্তু স্কুল যাওয়ার পর আমি এটি বাড়িয়ে দিলাম। প্রত্যেক সপ্তাহে, প্রত্যেক দিন এবং শেষ পর্যন্ত এক দিনে একাধিকবার কাটতাম।

আমি যখন স্কুলে ছিলাম, তখন শরীর কাটতে মন চাইত। বাথরুমে যখন আমি আমার শরীর জখম করতে ব্যস্ত, তখন ক্যালকুলাস কুইজে বাদ পড়েছি, আমি গুনেও শেষ করতে পারব না।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো, যখন আমার তিন ভালো বন্ধু আমাকে ছেড়ে গেল। তারা আমাকে এর আগে সাহায্যের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে, বিষণ্ন একজনকে বোঝানো অনেক কষ্টসাধ্য। প্রথমে আমি রাগ করেছিলাম। কিন্তু এর বিপরীতে তাদের কী করা উচিত ছিল?

আমার প্রথম পয়েন্ট ছিল: সাহায্য পাওয়া। সবাই বলত, ‘তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে পার’ এবং তারা তাদের গল্পে অপ্রয়োজনীয় মানসিক স্বাস্থ্যের লিংকগুলো পোস্ট করত। কিন্তু আপনি যখন আসলে কোনো বিষণ্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে থাকবেন, তখন এটা ঠিক করা কতটা অসম্ভব, তা বুঝতে পারবেন। আমি কতটা বিষণ্ন, তা বলে কখনোই কারও কাছ থেকে উপকার পাইনি। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। একমাত্র সেসব লোক যারা সত্যিকার অর্থে আঁকড়ে ছিল, তারা সেটা করতে বাধ্য ছিল। তারা স্রেফ যত্ন নেওয়ার ভান করত এবং কখনোই সরাসরি সাহায্য করত না। এটা ছিল আমাদের উভয়ের সময়ের অপচয়।

কোনো এক বছর শীতের একটি সময় অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি নিজের শরীর কেটে যাচ্ছিলাম। তখন আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি আবিষ্কার করলাম। আমি বিষণ্নতায় ভোগার বিষয়টি আর লুকাতে পারলাম না।’

প্রসঙ্গত, পরিবারটির এক বন্ধুর কাছ থেকে ফোন পেয়ে ডালাস শহরতলির অ্যালেনের পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার ওই বাড়িতে পুলিশ রাত ১টার দিকে তল্লাশির জন্য যায়। সেখানে গিয়ে একটি বাড়ির এক কক্ষে একইসঙ্গে বাবা-মা ও তিন সন্তানের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। একটু দূরেই পড়েছিল তাদের নানির লাশ।

নিহতরা হলেন- ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই-বোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ, বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন্নেসা (৭৭)।

ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেল্টি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডালাস মর্নিং নিউজকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার দুই ভাই পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post