কারো মুভমেন্ট পাস।। কতেক জীবনের সর্বনাশ!

নিউজ ডেস্কঃ কভিড-১৯ পরিস্থিতি এই মুহুর্তে বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে সকল সময়ের তুলনায় ভয়ানক। দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের সঠিক উপলব্ধি থেকেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় মানুষের জীবন বাঁচাতে লকডাউন এর মত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এবারের লকডাউনে কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশ আমাদের সাথে লকডাউনে নেই,কেউ আগে হয়েছে, পরিস্থিতি কাউকে পরেও করতে হতে পারে।

আমাদের লকডাউনে এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে, আমরা আমাদের নিজে থেকেই আন্তর্জাতিক সকল ফ্লাইট অফ করে দিয়েছি। নিশ্চয়ই যারা নীতিনির্ধারক তারা ভালো বুঝেন, কেন, কি কারণে প্রথমেই ফ্লাইট অফ করলেন।

আমার সরল মনে কিছু প্রশ্ন উঁকি দেয়, সেগুলোর জন্যই মূলত আমার লিখার এই প্রয়াস।

এই মুহুর্তে আমাদের দেশে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে আসা এবং ভিসা প্রসেসিং করে নির্ধারিত ফ্লাইটের অপেক্ষা করা মানুষের সংখ্যা কম-বেশি ৮০ হাজার হবে।

শুধু ১৪ থেকে ২০ তারিখে মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের মধ্যে কম করে হলেও ২০ হাজারের ভিসা এক্সপেয়ার বা ভিসা-ছুটি মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। দেশে যদি কারো ভয়ানক কোন ক্ষতি হয়, তাহলে মুভমেন্ট পাস পেয়ে কষ্টে-সৃষ্টে তার কাজ সমাধা করবে।যারা নিন্ম আয়ের রেমিট্যান্স যুদ্ধা, যারা কোন ভাবে দস্তখত শিখা মধ্যপ্রাচ্যের মরুর যুদ্ধা, যারা জীবনে দেশের কাছে ভর্তুকি চাওয়ার বা পাওয়ার সাহস নাই, চায়ও না,যাদের রেমিট্যান্স আমাদের গৌরবের রিজার্ভ হিসাবে সাইনবোর্ড জুলাই, যারা বেগম পাড়ায় বাড়ি বানানো শিখে নাই,যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অমানুষিক কষ্ট করে দেশের পতাকা ধরে বিশেষ দিনে আবেগে চোখের জল মরুতে ঢালে, তারা কোন পাস নিয়ে জীবন, জীবিকা,পরিবার আর ইজ্জত বাঁচাবে সেটা কি চিন্তায় ছিল? মধ্যপ্রাচ্যের কথাই আমি বার বার বলছি, কারণ ইউরোপ এর প্রবাস জীবন, ভিসা সিস্টেম আর মধ্যপ্রাচ্য বা মিডিলিষ্ট যাকে বলি আমরা একই রকম নয়।

এবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে কি বলতে পারবে, কাজের নিয়োগদাতা লেভার এর ছুটি বা ভিসা এক্সটেনশন করতে হবে ? তারা তো ফ্লাইট অফ করে নাই।তাদের আপত্তি নাই, তাদের দেশ থেকে করোনা আসার পরিস্থিতিও নাই, তাহলে বন্ধ করার গুনাহ টা তারা নেবে কেন?

শুনলাম কোন এক মন্ত্রী বাহাদুর নাকি মতামত দিয়েছেন যে, এবারের করোনায় সাউথ আফ্রিকা লন্ডনের সিমটম পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে এই দেশের ফ্লাইট গুলো অফ রাখা যেত। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, কাতার এই দেশগুলো আমাদের প্রবাসীরা অনেক বেশি এবং দেশগুলো অনেকটা দয়া প্রবল হয়ে আমাদের জন্য শিথিল নিয়ম রাখে,এগুলোর ফ্লাইট বন্ধ করার মানে কি?এগুলো তো আফ্রিকা বা ইউরোপ মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত নয়।

একজন মধ্যপ্রাচ্যের রেমিট্যান্স যুদ্ধার জীবন কাহিনি দেখা বা শুনার ধৈর্য্য বা মন-মানসিকতা এই মুহুর্তের মন্ত্রী পরিষদে অনেকেরই নাই, না হলে ওদের ও যে অধিকার আছে, ওরাও যে মুভমেন্ট পাস চাইতে পারে সেই প্রস্তাব কেউ রাখতে পারতেন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী কি আজ পর্যন্ত কোন ব্রিফ দিয়েছেন, এই লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত বা জীবন থেকে ছিটকে পরা স্বল্প আয়ের প্রবাসীগুলোর কি হবে? তাহলে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাজ কি?

কাল এবং আজ যতটুকু সম্ভব লকডাউন দেখলাম, লক্ষ লক্ষ মুভমেন্ট পাসের আবেদন দেখলাম, কয়েক লক্ষ মুভমেন্ট পাস আবার এপ্রোভ করতেও দেখলাম, শুধু লকডাউন দেখতে বের হওয়া মানুষও স্কিনে দেখলাম। সবই মুটামুটি চলছে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে,মানবিক কারণে রাষ্ট্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। তাহলে এই ভিটে-মাটি বিক্রি করে অগ্নি-রোদে অমানুষিক পরিশ্রম করে মরু প্রান্তর থেকে দেশ এবং পরিবারের ইজ্জত সম্ভ্রম রক্ষা করার দায়িত্বে থাকা মানুষগুলোর কেউ কি নাই? গরীব হয়ে জন্ম নেয়া, সৎ ভাবে নিরব থাকা, দেশপ্রেম কি রাষ্ট্রের কিছু নীতিনির্ধারকদের ভালো মনে হয় না?

একটা বিচিত্র দেশ ও জাতি আমরা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া একটা ভালো কাজ আশা করার পদস্ত মানুষ পাওয়া নেহাতই কঠিন।

আমি সংক্ষেপ করার স্বার্থে শুধু বিনীত অনুরোধ রাখি, আমার লিখা যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত কোন ভাবেই পৌছাবে না, সেটা আমি ভালো জানি, তাই কোন ভাবে যদি আপাদঃ মস্তক একজন সাদা মনের কাজে বিশ্বাসী মানুষ, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ কে এ মোমেন সাবের নজরে আসে,আর উনি সামান্যতম গুরুত্ব দিয়ে এই অসহায়, আজীবন দুঃখী প্রবাসী গুলোর মনের অবস্থা অনুধাবন করে, মানবিক মানুষ, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর প্রয়াস নিয়ে কাজ করা, জাতির জনকের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটা প্রস্তাব দিয়েও দেখেন তাতেই একটা কিছু হবে।

দেশ ও দুনিয়া মানুষের বসবাসের স্বাস্থ্যকর আবাস হোক। সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি।রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। একদিন দেরিতে হলেও সবাইকে বাংলা নব বর্ষের শুভেচ্ছা।

লিখক- মানবাধিকার সংগ্রামী ও সহ-সভাপতি, জাতীয় শ্রমিকলীগ সিলেট মহানগর।

Post a Comment

Previous Post Next Post