ই-পাসপোর্ট যুগে ঢুকছে বাংলাদেশ; ১৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন


অনলাইন ডেস্কঃ বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। আগামী ১৭ ডিসেম্বের এই পাসপোর্ট সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  প্রথমেই রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের হাতে ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। এরপর তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। তাদের কারিগরি সহযোগিতায় এটি চালু হচ্ছে। দুই ক্যাটাগরির ই-পাসপোর্টে চার ধরনের ফি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি জরুরি ও অতি জরুরি ই-পাসপোর্ট থাকছে।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডাসহ ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু আছে। ১১৯ নম্বর দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ২নং টার্মিনাল ইমিগ্রেশনে সাতটি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। এই ই-গেট দিয়ে দ্রুততম সময়ে ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন। এনআইডি ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারের সঙ্গে ই-গেট সংযুক্ত থাকবে। সঠিক পাসপোর্টধারী ব্যক্তি ছাড়া এই গেট দিয়ে পার পাওয়া অসম্ভব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, অনেক দিনের প্রত্যাশিত ই-পাসপোর্ট সেবা পেতে যাচ্ছেন নাগরিকরা। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। এদিন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হবে।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ সংযুক্ত থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয় নিশ্চিত করা যায়। এ  ছাড়া ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। সূত্র জানায়, জার্মানি থেকে এরইমধ্যে ই-পাসপোর্টের প্রিন্ট কপি দেশে চলে এসেছে। জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির চুক্তি অনুযায়ী ৩০ লাখ ই-পাসপোর্ট বই জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করবে। এরপর থেকে ই-পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। ওই কারখানা থেকে ই-পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ই-পাসপোর্ট সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। চার ধরনের ফির বিধান রেখে ই-পাসপোর্টের ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়ন করতে হবে না। এমনকি ছবি সংযোজন ও তা সত্যায়ন করারও দরকার হবে না। তবে পাসপোর্ট পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি লাগবে। ই-পাসপোর্টের পৃষ্ঠাসংখ্যা, মেয়াদকাল, বিতরণের ধরন অনুসারে ভ্যাট ছাড়া সর্বনিম্ন ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ফি ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে পাসপোর্টের জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৩ হাজার ৪৫০ টাকা এবং অতি জরুরি ফি ভ্যাটসহ ৬ হাজার ৯০০ টাকা। সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি দুটিই চালু থাকবে। নাগরিকরা যে ধরনের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবে, তাদের সেই পাসপোর্টই সরবরাহ করা হবে। পাসপোর্ট হবে ৪৮ ও ৬৪ পৃষ্ঠার। নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট বিতরণের পদ্ধতি তিন ধরনের। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি। দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে এবং অন্যান্য তথ্য সঠিক থাকলে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে। জরুরিভাবে পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিলে এবং অন্যান্য তথ্য ঠিক থাকলে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট দেওয়া হবে। অতি জরুরি পাসপোর্ট ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে পাসপোর্টের আবেদনকারীকে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ সংগ্রহ করে আবশ্যিকভাবে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে পুরনো অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে অতীব জরুরি পাসপোর্ট ২ দিনে, জরুরি পাসপোর্ট ৩ দিনে এবং সাধারণ পাসপোর্ট ৭ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে। ৪৮ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৩ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি ফি ৭ হাজার ৫০০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৫০০ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৭ হাজার টাকা, জরুরি ফি ৯ হাজার টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার টাকা।

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা সাধারণ ও জরুরি পাসপোর্ট পেলেও তারা অতি জরুরি আবেদন করতে পারবেন না। সাধারণ আবেদনকারীকে ৫ বছর মেয়াদের ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে ১০০ মার্কিন ডলার এবং জরুরি পাসপোর্ট পেতে ১৫০ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। একই পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পেতে খরচ করতে হবে ১২৫ মার্কিন ডলার ও ১৭৫ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের মুদ্রা। ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ১৫০ মার্কিন ডলার এবং জরুরি ফি ২০০ মার্কিন ডলার। একই পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিককে সাধারণ ফি বাবদ ১৭৫ মার্কিন ডলার এবং জরুরি পাসপোর্ট বাবদ ২২৫ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের মুদ্রা দিতে হবে। তবে বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এই ফি কমানো হয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত শ্রমিক বা শিক্ষার্থীদের ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে সাধারণ আবেদনে ৩০ মার্কিন ডলার ও জরুরি ক্ষেত্রে ৪৫ মার্কিন ডলার এবং ১০ বছর মেয়াদে ৫০ মার্কিন ডলার ও ৭৫ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট পেতে এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ বছরের জন্য ১৫০ ডলার ও ২০০ ডলার এবং ১০ বছরের জন্য ১৭৫ ডলার এবং ২২৫ ডলার বা সমমূল্যের মুদ্রা। তবে সাধারণ বসবাসকারী, শ্রমিক বা শিক্ষার্থীদের এসব ফির সঙ্গে দূতাবাস প্রদত্ত সারচার্জও যুক্ত হবে। ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান জানান, ই-পাসপোর্ট নিয়ে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরই ই-পাসপোর্ট বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। 

Post a Comment

Previous Post Next Post