পরিবেশ রক্ষায় আদিবাসীরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে; কুলাউড়ায় সুলতানা কামাল


বিশেষ প্রতিনিধিঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ঠা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সভাপতি, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, খাসিয়ারা পাহাড়ের পরিবেশ রক্ষা করছে। দীর্ঘদিন থেকে খাসিয়ারা পাহাড়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। ঝিমাই চা-বাগান কর্তৃক খাসিয়াদের যাতায়াতের রাস্তা ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও উচ্ছেদের পায়তারা রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে বসবাসে মানবাধিকার লংঘনের শামিল। বাংলাদেশে ধর্ম, বর্ণ নানা জাতিসত্ত্বার মানুষের বসবাস। তাহলে কেন খাসিদের তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে। তারা শত শত বছর থেকে যেখানে বসবাস করে এটা তাদের ঐতিহ্যগত অধিকার। 

১১ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই পুঞ্জিতে নাগরিক প্রতিনিধিদল ঝিমাই পুঞ্জির আদিবাসী খাসিদের ভূমি অধিকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, যাতায়াত সমস্যা পর্যবেক্ষণ করতে এসে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথাগুলো বলেন।

তিনি আরো বলেন, মানুষের চলাচলের পথ কেউ বন্ধ করতে পারে না। সেই পথ যদি কারো মালিকানা না থাকে তবে সেখানে বাঁধা দেবার অধিকার রাখে না। রাস্তায় চলাচল জনগণের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোন ক্ষমতা কারো নেই।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, আইপিডিএস, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন, বাপা, বেলা, ব্লাস্ট, নিজেরা করি ও এএলআরডি-র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ঝিমাই পুঞ্জির মন্ত্রী রানা সুরং। আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন (কুবরাজ) সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি (অব.) মো. নিজামুল হক, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জহুরুল হক শাকিল, সিলেট খ্রিস্ট্রিয় ধর্মপ্রদেশ বিশপ বিজয় এনডি ক্রুজ, এএলআরডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, মৌলভীবাজার জেলা শাখার আহবায়ক আসম সালেহ সুহেল, হবিগঞ্জ জেলা শাখার সম্পাদক তোফায়েল সুহেল, বাপা’র কেন্দ্রীয় সদস্য ফাদার যোসেফ গোমেজ, আধিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য এন্ডু সালামত, কুলাউড়া উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ আলম, আদিবাসী নেত্রী কুইনস বন সুরাং প্রমুখ। এসময় জেলার বিভিন্ন উপজেলার পুঞ্জির মন্ত্রীসহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভায় ঝিমাই পুঞ্জির খাসিয়ারা বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, আদিকাল থেকে বংশানুক্রমে আমরা পাহাড়ে বসবাস করে আসছি। বাগান কর্তৃপক্ষ আমাদের বলে অবৈধ দখলদার। ঝিমাই চা-বাগানের ভেতর দিয়ে ব্যবহৃত রাস্তায় চলাচল করতে বাগান কর্তৃক বাঁধা প্রদান, মহিলাদের জরুরী প্রসবকালীন সময় রোগী যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন করতে আপত্তি প্রদান করা হয়। আমরা চাই বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম মেনে তাদের লিজকৃত জায়গা নিয়ে থাকুক, কিন্তুু আমাদের বসবাসকৃত ভূমিতে তারা কোনরুপ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার চাই। পান চাষ করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। প্রাকৃতিক গাছ কেটে বাগান কতৃপক্ষ চারা রোপণ করছে এটা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি। পরিবেশ রক্ষায় আদিবাসীরা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এদিকে ঝিমাই চা-বাগান (কেদারপুর টি কোম্পানি লিমিটেড) এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মর্তুজা বলেন, খাসিয়াদের আনিত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাগান কর্তৃপক্ষ কখনো খাসিয়াদের যাতায়াতে বাঁধা প্রদান করে না। 

Post a Comment

Previous Post Next Post