শিশু অবস্থায় অটিজম সনাক্তকরণ


ডা. সাঈদ এনামঃ অটিজম মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত জনিত একটি সমস্যা। পরিবারে অনেকেই আছেন শিশুদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ দেখলে খুব ঘাবড়ে যান। তাদের ধারণা  বাতাস বা উপরি লেগেছে, কিংবা গর্ভাবস্থায় মা'র গায়ে খারাপ বাতাস লেগেছে। অনেকে আবার এর জন্যে মা,বাবা, বংশ কে দায়ী করেন। মনে করেন পূর্বপুরুষের পাপের ফল। এটি একেবারেই ঠিক নয়।

অটিজম মোকাবিলায় গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মানুষ এ থেকে সুফল পাচ্ছে। অটিজম যে কোন পারিবারের শিশুদের দেখা দিতে পারে।  অটিজমের লক্ষণ গুলো জন্মগত। ক্ষেত্র বিশেষে অটিস্টিক শিশুরা সাধারণ শিশুদের চেয়ে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে থাকে। পৃথিবী পালটে দেয়া বিজ্ঞানীদের অনেকের মাঝে অটিজমের কিছু লক্ষন ছিলো। স্যার আইজ্যাক নিউটন, আইনস্টাইন, আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল, বিজ্ঞানী কুরি,আর্কিমিডিস, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন এর নাম উল্লেখযোগ্য।

শিশু অবস্থায় কিভাবে বুঝবেন অটিজম?

একটি শিশুর মাইলস্টোন অব ডেভেলপমেন্ট বা মাস, বছর অনুপাতে শিশুর আচরন বিবেচনা করলে যে সকল উপসর্গ একটা অটিস্টিক শিশুর মধ্যে দেখা যায়, তা সংক্ষেপে নীচে দেয়া হলো।

৩ মাস বয়সেঃ

মা বা বাবার মুখের দিকে থাকবেনা, হাসবেনা।

হঠাৎ কোন শব্দের বা আলোর দিকে তাকাবে না।

চলমান খেলনার দিকে দৃষ্টি দিবে না ধরতে চাইবে না, নাড়াচাড়া করবেনা।

"ব-ব" "ত-ত"  শব্দগুলো করবে না।

৭-৮ মাস বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ

হাসবেনা, খেলা উপভোগ করবে না, মা বাবার সাথে উষ্ণ সম্পর্ক থাকবে না।

হাতের নাগালের বাইরের খেলনা হাত বাড়িয়ে আনতে চেষ্টা করবে না

শব্দ করলে শব্দের উৎসের দিকে তাকাবেনা।

মা বা বাবার প্রতি আলাদা কোন আকর্ষণ দেখাবে না, চিনবেনা।

ঘাড় শক্ত করে, সাপোর্ট সহ বা  সাপোর্ট ছাড়া বাছানায় বসবেনা।

ডাকলে তাকাবে না।

"অপছন্দ" বা "না" জিনিষ টি বুঝাতে পারবে না

উপুড় করে শোয়ালে চিৎ হবেনা। (সাধারণত এ বয়সে এটা করে)

হাত পা ছুড়াছুড়ি, নাড়াচাড়া করা, শব্দ করা, হাসি কান্না ইত্যাদি দ্বারা মা বাবার মনোযোগ আকর্ষণ করবেনা।

১২ মাস বা ১ বছর  বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ

অপরিচিত কাউকে দেখলে লজ্জা বা ভয় পাবেনা।

মা বাবার কাছ থেকে সরালে কাঁদবেনা।

"না" বললে সেটা বুঝবেনা বা মানবেনা।

শব্দ অনুকরণ করতে পারবেনা বা করবেনা।

আংগুল মুখে নিয়ে চুষবেনা।

"দাদা" "মামা" "নানা" "তাতা" ইত্যাদি পরিচিত শব্দ বলবেনা বা বলতে পারবেনা।

সাপোর্ট নিয়ে দাড়াতে বা হাঠতে পারবেনা।

হামাগুড়ি দিয়ে আগ্রহী কছুর দিকে আগাবেনা।

পেয়ালা বা গ্লাস আকৃতির কিছু দিলে তা মুখের ভিতর নিবেনা

মোবাইলে শব্দ করলে তা ধরবে না, ধরে নিয়ে মুখে বা কানে দিবেনা।
(অনুকরণ)

খেলনা বক্স বা জার থেকে  খেলনা বের করতে বা ঢুকাতে পারবেনা।

আগ্রহী খেলনা বা বস্তুর পেতে তার  দিকে চোখ বা আংগুল দিয়ে নির্দেশ করবে না।

ডাকলে সাড়া দেবে না।

বিপদে পড়লে বা কষ্ট পেলে সাহায্য চাইবে না।

অঙ্গ ভঙ্গি করবে না। যেমন মাথা দোলানো, হাত নেড়ে টা-টা দেয়া, ইত্যাদি।

খেলনা কাপড় বা কাগজ দিয়ে তার সামনে লুকালে তা খোঁজে বের করতে পারবেনা।

অহ, আহ,অফ, হু, ইত্যাদি শব্দ দিয়ে কিছু বুঝাতে পারবেনা অথবা এসব শব্দ অনুকরণ করবেনা।

২ বছর বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ

হাঁটবে না। দোড়াবেনা আর তা করলেও উদ্দেশ্যহীন, অগোছালো ।

সমবয়সী শিশু দেখলে রোমাঞ্চিত হবেনা, বা মিশবে না।

"পছন্দ" "অপছন্দ" বুঝাতে পারবেনা।

"লাল" "নীল" "সবুজ" বা বিভিন্ন রঙ বা এর ছবি আলাদা করে বুঝাতে পারবেনা।

কিছু দেখিয়ে দিলে অনুকরণ করবেনা।

খেলনা বা কোন বস্তু পিছনে টেনে টেনে নিয়ে যাবেনা বা সামনের দিকে ঠেলে যাবেনা।

অতি সাধারন বিষয়ে "হা" বা "না" নির্দেশনাবলী মান্য করবে না, বুঝবেনা।

৩ বছর বয়সে যা দেখা যেতে পারেঃ

শিশু আগ্রহ, অনাগ্রহ কিছুই বুঝাবে না বা বুঝাতে পারবেনা।

"আমি" বা "আমার" এটা বুঝাতে পারবে না।

কথাবার্তা অস্পষ্ট থাকবে।

হঠাৎ একেবারেই অর্থহীন শব্দ বলবে।

জিজ্ঞেস করলে নাম, বয়স বলতে পারবেনা।

শিশুদের সাথে মিশবে না, খেলবে না। খেললেও তা শিখিয়ে দেয়ার মতো না, হয়ত অদ্ভুত রকম খেলবে।

অন্যকে আঘাত করে বসবে বা নিজেকেও আঘাত করতে থাকবে।

চোখে চোখ রেখে কথা বলবেনা।

সিঁড়ি দিয়ে এক পা দু'পা ওঠা নামা করতে পারবেনা।

অপরিচিত কাউকে গ্রাহ্য করবে না।

রঙ দিয়ে  আঁকাজোকা করবে না।

তবে তিন বছরের কম বয়সের শিশুদের  মাইলস্টোন অব ডেভেলপমেন্ট পর্যবেক্ষণ করে কোন বিশেষজ্ঞ ছাড়া অটিজম নিশ্চিত হওয়া কঠিন।

অনেক সময় বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠার মধ্যে যে অসামঞ্জস্য থাকে, তা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে হেরফের হয়, এমন কি কখনো কখনো  ঠিকও হয়ে যায়।

আবার এমনও হতে পারে  জন্ম থেকে কিছু সময় পর্যন্ত তেমন কোন ত্রুটি হয়তো থাকেনা, পরে ধীরে ধীরে লক্ষণ দেখা যেতে থাকে।

অটিজম এ ব্রেইনের আণুবীক্ষণিক গঠন কি হয়ঃ

ব্রেইনের গুরুত্বপূর্ণ এরিয়া যেমন ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, রেটিকুলার সিস্টেম, সেরিবেলাম  ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত কোষ থাকে না, থাকলে সুগঠিত থাকেনা, এক অংশের সাথে অন্য অংশের সংযোগ ঠিক থাকে না  এমন কি অনেক অপরিচিত নার্ভ সেল থাকে যা থাকার কথা না।

লেখকঃ
ডা. সাঈদ এনাম
সহকারী অধ্যাপক
মানসিক রোগ বিভাগ
এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ,  সিলেট।

Post a Comment

Previous Post Next Post