রোহিঙ্গা ভোটার: নির্বাচন ভবন থেকে কর্মকর্তা আটক


অনলাইন ডেস্কঃ রোহিঙ্গাদের ভোটার করার চেষ্টায় জড়িত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করেছে কমিশনের এ সংক্রান্ত একটি কমিটি। এদের মধ্যে সোমবার বিকালে শাহানূর মিয়া নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) টেকনিক্যাল এক্সপার্টকে আটক করেছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।

এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (অপারেশনস) আবদুল বাতেন জানান, নির্বাচন ভবন থেকে তাকে আটক করা হয়। রাজধানীর নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, দুটি তদন্ত কমিটির দেয়া প্রাথমিক তথ্যে সন্দেহভাজন ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। যারা এ অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশিরভাগই ইসি থেকে আগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। তারা ইসির বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সব উপজেলা কর্মকর্তা ও যারা আমাদের লোকবল সরবরাহ করেন তাদের বলেছি, আগে চাকরিচ্যুতরা যেন ভোটার তালিকার কাজে সম্পৃক্ত হতে না পারেন।

এনআইডির ডিজি বলেন, আমরা ফাঁদ পেতে একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। সামরিক বাহিনীতে আমরা যেটা অ্যামবুশ বলি। এতে আমাদের চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের কর্মচারী জয়নালকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপর অন্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান হবে বলেও তিনি জানান।

‘জিরো টলারেন্স এগেইনস্ট করাপশন’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার এ নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে এনআইডির ডিজি বলেন, আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের কেউ জড়িত আছেন কিনা, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপচেষ্টায় যেই জড়িত হোক না কেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। ফৌজদারি মামলা কিংবা বিভাগীয় মামলাও করব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রবাসে যখন আমরা ভোটার করব, তখনও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা হবে। তিনি বলেন, ইসির মূল সার্ভার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রয়েছে।

২৪ জানুয়ারির আগে মূল সার্ভারে নতুন ভোটারদের প্রবেশের সুযোগ নেই। মূল সার্ভারে তথ্য সন্নিবেশ করার আগে ১ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। .এরপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। আর ২৪ জানুয়ারির পর আবারও যাচাই করে তাদের মূল সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। চলমান হালনাগাদে রোহিঙ্গারা টেম্পোরারি সার্ভারে ঢুকেছে। ৬১ জনের মতো চিহ্নিত করা হয়েছে।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদের কাছে স্মার্টকার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) পাওয়া যায়। মূল সার্ভারে তার তথ্য না থাকলে ওই কার্ড প্রিন্ট হতে পারত না।

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের টেম্পোরারি সার্ভারেও যাতে যুক্ত করা না যায় সেজন্য সব কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া সার্ভারে ঢোকার জন্য ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) মেসেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সার্ভারে ঢোকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একইদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাতজনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া ও ল্যাপটপসহ নির্বাচনের সরঞ্জাম আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

এরা হলেন- চট্টগ্রাম জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান ও পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা (বর্তমানে পাবনায় কর্মরত) আবদুল লতিফ শেখ, ঢাকা এনআইডি প্রজেক্টের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট সাগর ও সত্য সুন্দর দে, চট্টগ্রামের পটিয়ার বড় উঠান ইউনিয়নের শাহানুর মিয়া, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসের অস্থায়ী অপারেটর জনপ্রিয় বড়–য়া এবং ডবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন। - যুগান্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post