প্রবাসীদের পাসপোর্ট বিড়ম্বনা


অনলাইন ডেস্ক: প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের দূতাবাস থেকে সেবা পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁদের অভিযোগ, দূতাবাসে গিয়েও অনেক সংকটের কোনো সুরাহা হয় না। সময় মতো পাসপোর্ট পাওয়া যায় না, যায় না অন্য কোনো সেবা পাওয়াও। এটা ঠিক কোন মাত্রায়, তা নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতাই বলে দেয়।
নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই পাসপোর্টের আবেদন করে এক বছরেও পাসপোর্ট হাতে পাননি। ছয় মাসে পাসপোর্ট মেলেনি এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। কারণ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়পত্র না মেলা।
নিউইয়র্কের অনেক বাংলাদেশি নিয়মমতো ২২০ ডলার ব্যয়ে জরুরি পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। ক্যাটাগরি হিসেবে তাঁর হাতে এই পাসপোর্ট পৌঁছে যাওয়ার কথা ২০ দিনে। এটি তাঁর অধিকার। কিন্তু সেই পাসপোর্টই তাঁরা মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও হাতে পাচ্ছেন না। এ নিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল বলছে, পুলিশের ছাড়পত্র না পাওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে নাকি তাদের কিছু করার নেই। তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে যে, এই কনস্যুলেটটি তবে কেন? নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের জন্য কনস্যুলেট ক্যাম্প করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ঘুরে কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য দেওয়া—এগুলোই কি শুধু তাদের কাজ। অবস্থাদৃষ্টে অন্তত তেমনই মনে হচ্ছে। কারণ, প্রবাসে পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে প্রবাসীদের অভিযোগের বিপরীতে যখন কনস্যুলেট নির্দ্বিধায় বলে দেয়, ‘পুলিশ না ছাড়লে কী করব’, তখন বলতে হয়, এখানে সেবার কোনো নামগন্ধই নেই।
প্রতি মাসে রেমিট্যান্স হিসেবে কত বৈদেশিক মুদ্রা এল দেশে, রিজার্ভ বেড়ে কত হলো, এই সবের ফিরিস্তি বেশ বড় করে দেওয়া হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আমলাদের গর্বে গলা ফুলে উঠতেও দেখা যায়। কিন্তু যে প্রবাসীরা এই অর্থ পাঠাচ্ছেন, তাদের সেবা দিতেই প্রশাসনের যত অনিচ্ছা।
শুধু অনিচ্ছা কেন, প্রবাসীদের পকেটও কাটা হচ্ছে দারুণভাবে। পাসপোর্ট পেতে কনস্যুলেট পরামর্শ দিচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জোগাড়ের। এই ব্যক্তিগত যোগাযোগ মানে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় গিয়ে হত্যে দিয়ে বসে থাকা। কিন্তু সেটি যেহেতু প্রবাসীরা সরাসরি করতে পারছেন না। তাঁরা এ জন্য তৃতীয় কোনো লোকের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে, সোজা বাংলায় যাকে দালাল বলে। এই দালালসহ পুরো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বের করে আনতে প্রবাসীর পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ৩০ হাজার টাকা বা তারও বেশি।
অবস্থা চলতে পারে না। বিশেষত বিদেশে দীর্ঘদিন অবস্থানরত ব্যক্তির দেশের পুলিশ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রশ্নটি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। আর কনস্যুলেট কার্যালয়কে সেবার মান বাড়িয়ে বোঝাতে হবে যে, তারা কোনো অলংকার নয়, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। -  প্রথম আলো

Post a Comment

Previous Post Next Post