সীমান্ত সম্মেলন; সাম্প্রতিক সময়ে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’র সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে


অনলাইন ডেস্কঃ গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় এ বছর প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বেশি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হত্যাকাণ্ড’ শব্দের সঙ্গে তিনি একমত নন।

সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হচ্ছে। তবে বিএসএফ মহাপরিচালক স্বীকার করেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু’র সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তার ভাষ্য, যখন কোনো বিকল্প থাকে না, প্রাণ বাঁচাতে বিএসএফ প্রতিহত করে শুধু। মানুষের জীবন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সব ক’টি ঘটনাই ভারতীয় ভূমিতে ঘটেছে, আর তাতে বিএসএফ সদস্যরাও প্রাণ হারিয়েছেন।

পিলখানা সদর দফতরে শনিবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সেস (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী বৈঠক শেষ হয়। এরপর ছিল একটি সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং ও প্রশ্নোত্তর পর্ব।
মাস কয়েক আগে সাতক্ষীরা সীমান্তের কাছে এক যুবকের মুখ ও পায়ুপথে পেট্রল ঢেলে বিএসএফ হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর কারণ কী? জবাবে বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র সাতক্ষীরার ওই যুবক সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি ‘হত্যাকাণ্ড’ শব্দ ব্যবহারে আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, মানুষের জীবন আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিএসএফকে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি মাঝে মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দুর্বৃত্তরা বিএসএফের ওপর পাথর ছুড়েছে, লাঠিপেটা করেছে, কখনও কখনও দা দিয়ে হামলা করেছে। কোনো বিকল্প না থাকায় প্রাণে বাঁচতে খুব অল্প কিছু ঘটনায় বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রজনীকান্ত জানান, গত বছর ভারতীয় ভূমিতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি ও ছয়জন ভারতীয়। একজন জওয়ান মারা গেছেন, ৩৯ জন আহত হয়েছেন। এ বছরও তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা প্রতিটি ঘটনায় নিয়মমাফিক থানায় মামলা করেছেন ও তদন্ত করেছেন। ভারতীয় ভূমিতে দুর্বৃত্তদের সহযোগীদের গ্রেফতার করেছেন। তারা বিজিবি ও বিএসএফকে সীমান্তের যেসব জায়গা দুর্বল, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন। এতে করে অবৈধ অনুপ্রবেশের মতো ঘটনা ঘটবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ফেলানী হত্যাকাণ্ড ও মেহেরপুরে আম পাড়তে গিয়ে এক বালকের বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিচার হয়েছে কিনা- তা জানতে চাওয়া হয়। বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, বিএসএফের সর্বোচ্চ গুরুত্ব রয়েছে এ বিষয়গুলোর প্রতি। তবে দুটি ঘটনার কোনোটির বিচার ঠিক কী অবস্থায় আছে, তা জানাননি তিনি। তাদের সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করবে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, বিএসএফের মহাপরিচালক সবই বলে ফেলেছেন। আমরা তিন দিনব্যাপী বৈঠকে সীমান্তে ‘মৃত্যু’ নিয়ে কথা বলেছি এবং এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছি। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, কিছু বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। দুই পক্ষ মাদকদ্রব্য চোরাচালান, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান এবং নকল টাকা রোধ নিয়ে আলোচনা করেছি। দুটি বাহিনীর কেউ যেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করে, সে ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে। ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে জোরদার করতে বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল র‌্যালি নিয়ে চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকায় পৌঁছাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে আবারও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশ এ ধরনের সব ঘাঁটি নির্মূল করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে এবং এতে তারা সন্তুষ্ট। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ভারতে জেএমবিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগ প্রসঙ্গে রজনীকান্ত মিশ্র বলেন, বৈঠকে এ নিয়ে সে অর্থে আলোচনা হয়নি। তবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হয় না।

ভারতে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে সে দেশের সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল। এর সত্যতা কতটুকু এমন প্রশ্নে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাজ সীমান্ত পেরিয়ে কেউ এদিক-ওদিক গেল কিনা, তা দেখা। সঙ্গে আরও কিছু বিষয় নজরদারি করা হয়। এ বৈঠকে ‘জঙ্গি হামলা’ নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না।

পিলখানার এ বৈঠক বিজিবি-বিএসএফের মধ্যকার ৪৮তম সম্মেলন। এতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। - যুগান্তর

Post a Comment

Previous Post Next Post