প্রধান শিক্ষক আবদুল মালিকের বিদায়ী সংবর্ধনা নিয়ে কিছু কথা


কামরুল ইসলাম রুহেলঃ আলোচনা প্রসঙ্গ “প্রধান শিক্ষক আবদুল মালিক স্যারের বিদায়ী সংবর্ধনা এবং কতিপয় কিছু স্থানীয় মতামত।”

ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিকতা বলতে গেলে কুলাউড়া উপজেলা তথা মৌলভীবাজার জেলার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে কর্মধা ইউনিয়ন। ঐতিহ্যবাহী কর্মধা ইউনিয়নের সন্তানেরা দেশে-বিদেশে  নিজেদের অবস্থান থেকে অবদান রেখে কর্মধার নাম উজ্জ্বল করে চলেছেন। আর সে উজ্জ্বলতার পেছনে অন্যতম বড় অবদান 'কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়'।

'কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়' কেবলই একটি নাম নয়, বরং এর নামের এক একটি অক্ষরগুলো হলো এক একটি ইতিহাসের অধ্যায়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে আজ অবদি এর প্রজ্বলিত আলো থেকে আলোকিত হয়ে চলেছে দেশ, দেশের মানুষ।

আলোচনা প্রসঙ্গ “প্রধান শিক্ষক আবদুল মালিক স্যারের বিদায়ী সংবর্ধনা এবং কতিপয় স্থানীয় মতামত।”
গত ২৭ শে মার্চ ২০১৯ এ কর্মধা স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত  হয় প্রধান শিক্ষক ‘আব্দুল মালিক’ স্যারের বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। স্কুল প্রতিষ্ঠা থেকে বিদায় অবদি আবদুল মালিক স্যার ছিলেন স্কুলের সাথে। উনার জীবনের ৩৮টি বছর উনি সেবা করে গিয়েছেন স্কুলের। সময়টা জুড়ে ছিলেন শিক্ষক, অভিজ্ঞতায় পেয়েছেন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব ও সম্মান। কোন কিছু দ্বারাই উনার অবদানকে মাপকাঠিতে ফেলা যাবে না। উনার ত্যাগ ও অবদান অতুলনীয়। কর্মধার বাচ্চা-বুড়ো এমন কেউ নেই যারা ‘'আব্দুল মালিক’ স্যারকে চেনে না। স্কুলের জন্ম থেকে পুরোটা সময় উনার কাছে ছিলেন, সামনে থেকেছেন।

তবে হ্যাঁ, কিছু মানুষ আছেন যারা কখনো সামনে আসেননি। স্কুলের জন্মলগ্ন থেকে আজ অবদি পৌঁছানোয় উনাদের অবদান ছিল, আছে। উনারা কখনো ভূমি দিয়ে, কখনো শ্রম দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে স্কুলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। স্কুলের প্রতিটি ধূলিকণা সাক্ষী উনাদের আত্মত্যাগের ব্যাপারে। যা কখনো ভুলার নয়। কিন্তু অবাক লাগলো গতদিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি দেখে। অনুষ্ঠানের মঞ্চে অনেকেই ছিলেন। কিন্তু আরও অনেকে থাকার মত ছিলেন, যারা নিজেদের পিঠে বয়ে নিয়ে এসেছেন স্কুলটাকে।আগত অতিথিদের অনেকে অনেক কথা বলে গিয়েছেন, অনেকের কথা স্মরণ করে গিয়েছেন। কিন্তু অবাক লাগলো, এরকম কিছু মানুষ আছে- যারা স্কুলের প্রয়োজনে অসংখ্য ত্যাগ করে গিয়েছেন যার বেশির ভাগ খাতা পত্রে লিপিবদ্ধহীন। আগত অতিথিরা সেসব অমর মানুষদের নামটি পর্যন্ত মুখে নেন নি। তাও যারা এক আধটু নিয়েছেন, সেটা না নেয়ার মতই। কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিল না।

এলাকার মানুষ কি জানে না? এই স্কুলের জন্মের পেছনে কারা ছিলেন? কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজিব আলী, সাবেক মেম্বার আলহাজ্ব হাশমত আলী, আলহাজ্ব মখছন্দ আলী উনাদের অবদান ত্যাগ কি ভুলবার মত? কিভাবে সম্ভব উনাদের মত মানুষদের ‘'কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়'-এর স্মরণীয় তালিকা থেকে মুছে ফেলা! উনাদের ত্যাগ নিয়ে বলতে গেলে বরং সে সবেরই অপমান করা হবে। বাহ্বা ওসব করেনি উনারা। উদাহরণ স্বরুপ একটি ছোট ব্যাপার হলো - স্কুল বিল্ডিংয়ের চার পাশে উনার ক্ষেতের জমি। কিন্তু ধানের সময়ে তো হাল দিতেই হবে। দিনে ট্রাক্টর চালালে শব্দে স্কুলের বাচ্চাদের পড়াশোনায় ক্ষতি হবে৷ এই ভাবনা থেকে  উনি রাতে ট্রাক্টর চালাতেন। কত গভীর ছিল উনার ভাবনা, স্কুল আর স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে! বলার অন্ত রাখে না। বলতে গেলে অসংখ্য কথা আসবে, যেগুলো উনারা করে গিয়েছেন দেয়ালের আড়াল থেকে।

এখানে বলা অনুযোগের কথাগুলো আমার ব্যক্তিগত না। বরং অনুষ্ঠানের পরে স্থানীয় মানুষদের মুখে মুখে চলছিল কথাগুলো। কারণ, মানুষ জানে, কার বা কাদের অবদান এই স্কুলের মেরুদণ্ড দাঁড় করানোয়। আমি কাউকে ছোট করার উদ্দ্যেশ্যে নিয়ে কিছু  বলছি না। তবু, কিছু কথা না বললেও অপরাধবোধ কাজ করে। এগুলো সেরকমই কথা। যারা স্কুলকে দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখে দেখে পৃথিবী ছেড়েই চলে গিয়েছেন। এটা কি অন্যায় নয় উনাদের সে সব ত্যাগের প্রতি?

কথাগুলো কেবলই কিছু স্থানীয় মানুষের নীরব অনুযোগ,  গোপন ভালোবাসার প্রতিফলন যা কখনো উনারা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। উনাদের চাপা কষ্টের ব্যাপারটা আমি কিছু শব্দে নিয়ে এসেছি মাত্র। 

যারা ছিলেন মঞ্চে, উনাদের নিয়ে কিছু বলছি না। সবাই যার যার যোগ্যতা নিয়েই আছেন। তবুও, ‘' কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়’এর   এত বড় একটা অনুষ্ঠানের মঞ্চে কি নজিব আলী চেয়ারম্যান কিংবা সাবেক প্রধান শিক্ষক নবেন্দু দাস স্যার ছাড়া অসম্পূর্ণ নয়? যারা ছিলেন আয়োজনে, উনারা কি জানেন না? কারা এই স্কুলের দেয়ালগুলো দাঁড় করাতে নিজের কাঁধ এগিয়ে দিতেও প্রস্তুত। 

যাইহোক, এই স্কুলটা কেবল একটি স্কুল নয়, বরং বিশাল ইতিহাস গ্রন্থ, সম্মান। এর জন্মে যারা ছিলেন তাদেরকে মানুষ ভুলে গেলেও স্কুল ভুলবে না। এই স্কুলের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করে অলিখিত ভাবে কিন্তু উনাদেরকেই সম্মান করে চলেছেন।

আজ যারা সামনে আছেন, উনারা সেই ত্যাগী মহৎপ্রাণ মানুষদের ভুলে গেলেও স্কুল ভুলবে না, ভুলবে না স্কুলের ধূলিকণা। স্কুলের প্রতিটি দেয়ালে সেই সব মানুষদের অবদান আজীবন লেগে থাকবে।  সেটা কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কখনোই না।।

লিখেছেন: কামরুল ইসলাম রুহেল
প্রাক্তন ছাত্র, কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়।

মতামতঃ আমাদের ইনবক্সে পাঠানো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনাকৃত বিষয়সমূহ এই বিভাগে (মতামত) প্রকাশ করা হয়ে থাকে। লেখকের একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত যার জন্য সম্পাদক ও প্রকাশক দায়ী নহেন

Post a Comment

Previous Post Next Post