সম্পত্তির দ্বন্দ্ব, লাশ নিয়ে দুই স্ত্রীর টানাটানি


অনলাইন ডেস্কঃ মরেও যেন শান্তি পেলেন না সাতক্ষীরার বিশিষ্ট আইনজীবী মো. ইয়ার আলি (৮০)। ষষ্ঠবারের মতো মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল আটটার দিকে মারা যান তিনি। পরে তাকে নিয়ে আসা হয় সাতক্ষীরার বাড়ি কলরোয়া উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে।

তবে বাড়িতে আনার পর ৩৬ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও তার দাফন হয়নি। পারিবারিক জটিলতায় আটকে আছে তার দাফন। এরই মধ্যে তার মরদেহে পচন ধরেছে। মঙ্গলবার বিকালে এই রিপোর্ট লেখার সময়ও তার মরদেহ ছিল প্রয়াত আইনজীবীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে। দাফনে বাধা দিয়েছেন প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তার ছেলেমেয়েরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির প্রথম স্ত্রী জোহরা খাতুনের চার মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছেন। অপরদিকে দ্বিতীয় স্ত্রী শাহিদা খানমের রয়েছে একমাত্র ছেলে প্রিন্স। ইয়ার আলি তার জীবদ্দশায় তার নামীয় ৩০ বিঘারও বেশি সম্পত্তি, কোটি টাকার উপরের ব্যাংক ব্যালান্স এমনকি বসত বাড়ির পুরোটাই তার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে প্রিন্সের নামে লিখে দিয়েছেন। জমি বাড়ি ও গচ্ছিত টাকা এক কড়িও পাননি তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানরা। অ্যাডভোকেট ইয়ার আলির মৃত্যুর পর তারা পৈতৃক সম্পত্তি ও টাকাকড়ির দাবি করেছেন। এসব না পাওয়া পর্যন্ত তারা ইয়ার আলিকে দাফন করতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

এরই মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তার বাড়িতে গেছেন সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেনসহ আইনজীবীদের একটি দল। একই সঙ্গে সেখানে বারবার গেছেন কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ এবং স্থানীয় কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান হোসেনসহ অনেকেই। তারা বিষয়টি সমঝোতামূলকভাবে নিষ্পত্তির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ফলে মঙ্গলবার বিকাল নাগাদও তাকে দাফন করা হয়নি। এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরতে শুরু করেছে বলে জানান এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির প্রথম পক্ষের স্ত্রী জোহরা খাতুনের ছেলে অ্যাড. হাসনাত কবির বলেন, ‘আমার বাবা আমার মা ও তার চার মেয়ে এবং আমাকে সহ প্রথমপক্ষের সবাইকে জমি টাকা ও বাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।  তিনি আমাদের কাউকে এক কানাকড়িও দেননি। তিনি তার সব স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দ্বিতীয় পক্ষের মা ও তার ছেলে প্রিন্সকে দিয়ে গেছেন। এতেই আমরা ক্ষুব্ধ। সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ আমাদের নামে না দেয়া পর্যন্ত তার লাশ দাফন করতে দেয়া হবে না।'

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বারবার চেষ্টা করেও দাফনে নিজের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ইমরান হোসেন বলেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রী দুই পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। তিনি বলেন, প্রথম পক্ষ বলছে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক তাদেরকে কিছু সম্পদ দিতে হবে। অপরদিকে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও তার সন্তানের দাবি প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলিকে গত ৩২ বছর ধরে সেবা দিচ্ছেন তারা। এজন্য তিনি সন্তুষ্ট হয়ে সব কিছু তাদের নামে দিয়ে গেছেন। এর থেকে এক শতক জমিও আমরা দেব না।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহম্মদ জানান, প্রয়াত আইনজীবী ইয়ার আলির দাফন সম্পন্ন করার নির্দেশ চেয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি সাতক্ষীরা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ নির্দেশ পেলে প্রয়োজনে পুলিশ তাকে ইসলামী শরিয়ত মতে দাফন করার ব্যবস্থা করবে।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমি সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হয়ে দাফনের নির্দেশ পেয়েছি। এই নির্দেশের কপি কলারোয়া থানায় পৌঁছালেই পুলিশ তার দাফনের ব্যবস্থা নেবে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post