দক্ষিণ আফ্রিকায় আবার জাগছে কৃষ্ণাঙ্গরা

অনলাইন ডেস্কঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতারা একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য জীবনের পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন দেশটির কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা। স্বাধীনতার কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও আফ্রিকায় বৈষম্য এখনও লাগাম ছাড়া।

প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকের দেশটির চাবিকাঠি শ্বেতাঙ্গদের হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষিজমির নব্বই ভাগেরও বেশি এখনও শ্বেতাঙ্গদেরই দখলে। মাত্র ৮ শতাংশ জমি কৃষ্ণাঙ্গদের মালিকানায়।

ভূমি সংস্কার করে জমির ন্যায্য বণ্টনের দাবিতে আবারও জেগে উঠছে কৃষ্ণাঙ্গরা।

এ নিয়ে চাপের মুখে সরকার। বুধবার বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্বেতাঙ্গদের দাপটে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কৃষ্ণাঙ্গরা এখন জবরদখল করে শ্বেতাঙ্গদের জমি দখল করছে।

জোহানেসবার্গের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় জমি দখলে থাকা এক কৃষ্ণাঙ্গ নারী বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে কালোদের দেশ। এটাই ইতিহাস। এরপর আর কোনো কথা নেই। শ্বেতাঙ্গরা এখানে বিদেশি। আমরা আমাদের জমি ফিরে পেতে চাই। প্রয়োজনে জোর করে কেড়ে নেব।’

নিজের জমিতে দাগ কেটে ৫০ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা মাশাবা বলেন, ‘এটাই আমার জমির সীমানা। আমি আশা করছি এখানে আমি একটা বাড়ি বানাব। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। সরকারের সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে চাই না।’

মাটিতে লাঠি পুঁতে এবং পতাকা লাগিয়ে একই কাজ করেছেন তার মতো আরও অনেকে। ক্রিস্টিনার মতো আরও যারা এভাবে জমি দখল করেছেন তারা জানেন, কাজটা বেআইনি।

ইলেকট্রিশিয়ান ইসমাইল মাতসোয়ালি স্বীকারও করলেন সেটা। কিন্তু ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পরও দেশটিতে ভূমি সংস্কার না হওয়ায় তিনি হতাশ।

ইসমাইল বলেন, ‘ছোট্ট এক টুকরো জমি চাই, যেখানে আমি আমার পরিবার নিয়ে বসবাস করতে পারি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিশ বছর পরও আমরা কৃষ্ণাঙ্গরা এখনও অবহেলিত।’ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ওই কৃষি খামারে ঘণ্টাখানেক পরেই পুলিশ এসে পৌঁছলে শুরু হয় উত্তেজনা।

মাসাফি কুবাই নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ বলেন, এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর দিয়ে অনেক ঝড়-ঝাপটা যাবে, জমির বিরোধ নিয়ে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে।’

দেশীয় ভূমি আইন ১৯১৩ অনুসারে শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে জমি কেনা বা ভাড়া নিতে পারবেন না কৃষ্ণাঙ্গরা।

১৯৯৪ সালে জাতি বৈষম্য অবসানের পর আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) বলেছিল, ২০১৪ সালের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গদের ৩০ শতাংশ জমি ফেরত দেয়া হবে।

এ পর্যন্ত মাত্র ৮ শতাংশ জমি কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এখন ভূমি সংস্কার করার উপায় খুঁজছেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post