বাঁশ শিল্প যেভাবে জাপানের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল

বাঁশ শিল্প যেভাবে জাপানের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল

অনলাইন ডেস্কঃ জাপানের ইতিহাসে প্রথমে চীনা সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল। এরপর একটা দীর্ঘ সময় ধরে বিচ্ছিন্ন যুগ পার করেছে তারা। সতের শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে প্রবেশ করে। ১৮৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাশ্চাত্যের সামনে জাপানকে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সেই বিচ্ছিন্নতা যুগের অবসান ঘটে।

দীর্ঘ সময় ধরে জাপানিরা নিজেদের গুটিয়ে রাখলেও উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে জাপানিরা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের দ্বার উন্মোচন করে। ইউরোপের বণিকরা কাঠের উপর ছাপচিত্র, ক্যালিগ্রাফি আর জাপানিদের সিরামিকস শিল্পের সংস্পর্শে এসে রীতিমতো মুগ্ধ হয়। তবে ইউরোপের ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল নিপুণ হাতে বোনা বাঁশের শিল্পকর্ম। লন্ডন এবং প্যারিসের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হতো এসব শিল্পকর্ম।

বাঁশ দিয়ে নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করত জাপানিরা। নিজেদের প্রয়োজনেই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রই বিদেশিদের কাছে শিল্পকর্মের মর্যাদা লাভ করতে লাগল। জাপানিদের কাছে তখনো সেগুলো শিল্পকর্মের মর্যাদা লাভ করেনি। যারা এই বাঁশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাও এটিকে কোনো উচ্চ শিল্পকর্ম হিসেবে দাবি করেননি।

শুধু তখনই নয়, এখনো ইউরোপের বাজারে রয়ে গেছে বাঁশের তৈরি নানা শো পিসের গুরুত্ব। জাপানিদের হাতের ছোঁয়ায় এসব বাঁশের শো পিসগুলোই হয়ে উঠেছে উচ্চমানের শিল্পকর্ম। ধীরে ধীরে জাপানিরাও বুঝতে পেরেছে এর গুরুত্ব। তাই সময়ের প্রয়োজনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আধুনিক শিল্পকারখানায় তৈরি হলেও কেউ কেউ এটিকে শুধু শিল্পকর্ম হিসেবেই ধরে রেখেছেন। তাই এখন তারা শুধু পশ্চিমা বাজারের কথা বিবেচনা করেই বাঁশ দিয়ে নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করে যাচ্ছেন। বাঁশ শিল্প পরিণত হয়েছে জাপানের ঐতিহ্যে।

বিশেষ করে আমেরিকানরা ভাস্কর্য পছন্দ করেন বলেই তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা বাঁশ দিয়ে নতুন মাত্রার আধুনিক সব শো পিস তৈরি করেন। আগে জাপানিরা এটা করত না। তারা এটা বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছে। তবে কেউ কেউ এটিকে শিল্প হিসেবেও বেছে নিয়েছেন। বাঁশ দিয়ে এই ধরনের শিল্পকর্ম তৈরির জন্য দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রশিক্ষণও নিতে হয়। তবে বাঁশ দিয়ে শো পিস তৈরি করে শিল্পীর মর্যাদার লাভ করার প্রতি আগ্রহীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। তবে এখন যারা এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তারা আশা করেন, পশ্চিমা বাজার আরো বেশি সম্প্রসারিত হলে এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী হবে ভবিষ্যত্ প্রজন্ম। সিএনএন

Post a Comment

Previous Post Next Post