নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অদ্ভুত সময় পার করছি আমরা। যে যেভাবে পারছে মানুষ হত্যা করে চলছে। কোনদিন শুনবেন না- এক বাঘ তার বনের ১০টা বাঘকে হত্যা করেছে। কিন্তু মানুষ মানুষকে আজন্ম হত্যা করে চলছে। কখনো ধর্ম, কখনো রাজনীতি কিংবা ব্যক্তিগত দ্বন্দের কারণে।”
মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী নাহিদ আহমদ মাহির ফেসবুক স্ট্যটাস। ২০১৬ সালে ১৬ জুলাই নাহিদ দেশের চলমান সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক হত্যানান্ডের চিত্র তুলে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট ’nahid ahmed mahi’ থেকে ঘৃনা প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু এই রাজনৈতিক কোন্দলের বলি হতে হলো তাকেই।
অবশ্য নাহিদ ২০১৬ সালে রাজনীতিতে আসার পরক্ষণেই নিজের ব্যাপারে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
একই বছরের ডিসম্বর ১৬ তারিখ মাহি তার ফেসবুকে সাদাকালো একটি ছবি দিয়ে লিখেছিল- “সাদাকালো হলেই কি সব হয়ে যায় শুধুই সাদাকালো? এর চাইতে রঙিন কিছু, এর চাইতে বেশি আলো কোথাও খুঁজে লাভ আছে কি, কোথায় আমি পাব বল?” মাহি এভাবে হিংস্র রাজনীতির বলিতে স্মৃতি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বার্তা দিয়েছিল মানুষকে।
জানা যায়, ২০১৬ সালের দিকে মৌলভীভাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায়ই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে মাহি। নিজের বন্ধুদের নিয়ে তার একটি গ্রুপ ছিল। যেখানে সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে দ্বন্দ তৈরী হলে বন্ধুত্বে ফাটল দেখা দেয়। সেই দ্বন্দের জেরে মূলত মাহি খুন হয়। ২০১৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বরে মাহি তার ফেসবুকে লিখে ‘যে ইচ্ছাপূর্বক বন্ধুকে ঠকায়, সে তার খোদাকেও ঠকাতে পারে’ তার পরদিন মাহি লিখেছিল - “প্রত্যেক প্রাণকেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়”।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, সদর উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে মাহি তার মামা গোলাম ইমরান আলীর কাছে থেকে লেখাপড়া করত। মাহির মামা গোলাম ইমরান আলী জানান, মাহি অত্যান্ত ভদ্র ও নম্র ছেলে। সবসময় সমাজ দেশ ও মানুষকে নিয়ে ভাবতো। সর্বশেষ তার এসএসসি পরিক্ষা নিয়ে সে ব্যস্ত ছিল। এসময় রাজনীতি থেকে দূরে ছিল সে। তবুও তার ভাগ্নেকে বাঁচতে দেয়া হয়নি।
এ হত্যাকান্ডের দুদিন পর ৯ ডিসেম্বর মাহীর সাথে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মোলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহমেদ জানান, এই মামলার আসামীদের ধরতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আসামিদের ধরতে আমরা অভিযান চালু করছি বলেই স্বেচ্ছায় বাধ্য হয়ে তারা এখন আত্মসর্পন করছে।
এ পর্যন্ত এই মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কনক, আল-জামিল , রুবেল মিয়া। ২নং আসামী আরাফাত রহমান আদালতে আত্মসমর্ণপন করেছেন। ২ জন আসামী অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকায় আদালত ওই দু জনকে ঢাকা গাজীপুর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। বাকী দুই জনকেই মৌলভীবাজার কারাগারে রাখা হয়েছে।