নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আলোড়ন তোলে যন্ত্রমানবী
দেশের বৃহত্তম তথ্য-প্রযুক্তি উৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে আমন্ত্রিত হয়ে ৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় পৌঁছে বিশ্বের প্রথম সামাজিক রোবট সোফিয়া। তবে সপ্তাহখানেক আগে থেকে গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হওয়ায় যন্ত্রমানবী সোফিয়াকে নিয়ে বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি হয় জনমনে।
৬ ডিসেম্বর সকালে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করে সোফিয়া।
একই দিন দুপুরে ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ সেশনে দুই হাজার দর্শনার্থীর জন্য সরাসরি সোফিয়া দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে উপস্থিত হন ১০ হাজারের বেশি। ভিড় ঠেলে ঢুকতে না পেরে বাইরের এলইডি স্ক্রিনে সোফিয়াকে দেখেই আশা পোরাতে হয়েছে অধিকাংশের। এদিন রাতেই বাংলাদেশ ছাড়ে সোফিয়া। ২০১৭ সালের বাংলাদেশের প্রযুক্তি অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি ছিল এই রোবট।
উল্লেখ্য, রোবটটি নির্মাণ করে হংকংভিত্তিক ‘হ্যানসন রোবটিক্স’। অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্নের মতো দেখতে সোফিয়া প্রথম জনসমক্ষে আসে চলতি বছরের ১১ অক্টোবর। সৌদি আরবের নাগরিকত্ব পাওয়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবটটি নিজে থেকেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে।
কাঙ্ক্ষিত পেপ্যাল-জুমের উদ্বোধন
বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সারদের কাছে ২০১৭ সালে ব্যাপক আলোচনার বিষয় ছিল পেপ্যাল-জুম। ১৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনার নতুন এই সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এই সেবায় সোনালী, রূপালীসহ ৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশের সেবাগ্রহীতা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার বা প্রাপকের অ্যাকাউন্টে সরাসরি স্বল্প খরচে, স্বল্প সময়ে টাকা পাঠাতে পারবেন। এই মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে সাধারণত ৪০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। একই ধরনের সেবা পেইনিওর বা ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে খরচ তুলনামূলক বেশি।
বাংলা ভাষার ডিজিটাল বিপ্লবের শুরু
বাংলা ভাষা ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয় বছরের শুরুতে। তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার বাড়ানো, বাংলা কম্পিউটিংয়ের নতুন নতুন উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকার একটি প্রকল্পে অনুমোদন দেয় জানুয়ারিতে। ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’ নামের এই প্রকল্পে তৈরি করা হবে ১৬টি সফটওয়্যার। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৯ কোটি দুই লাখ টাকা।
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিবস এবং পুরস্কার প্রবর্তন
এ বছরই দেশে প্রথমবারের মতো পালন করা হলো ‘জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি দিবস’। ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ১২ ডিসেম্বরকে এই দিবস হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। দিবসটির সঙ্গে প্রথমবারের মতো জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি পুরস্কারও প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে ৯ ব্যক্তি ও ছয় প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পুরস্কার দেয় সরকার। শিক্ষা, সাংবাদিকতা, কৃষি, নাগরিক সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি রপ্তানি, অনলাইনে ব্যাংকিং সেবা ও উদ্যোগ বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রথম পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক
ঢাকার বাইরে প্রথম পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক হিসেবে ১০ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে যশোরের ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তি কাজে আগ্রহী ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে এই হাইটেক পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় ১৫ তলা মূল ভবনসহ পার্কটিতে মোট জায়গা দুই লাখ ৩২ হাজার বর্গফুট। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা।
নতুন ১২ জেলায় হাইটেক পার্ক অনুমোদন
এ বছর নতুন করে খুলনা, বরিশাল, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নাটোর, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও সিলেট জেলায় ১২টি হাইটেক পার্ক অনুমোদন পেয়েছে। ২৫ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ২০২০ সালের মধ্যে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক হাজার ৭৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। দেশে অনুমোদন পাওয়া হাইটেক পার্কের সংখ্যা এখন ২৮টি।
মহাকাশে ব্র্যাক ন্যানো স্যাটেলাইট
দেশের প্রথম স্যাটেলাইট হিসেবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ‘ব্র্যাক অণ্বেষা’ চলতি বছরের ৪ জুন মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স আর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সিআরএস-১১ অভিযানে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেটে করে ন্যানো স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইটটি প্রথমে মার্চে মহাকাশে পাঠানোর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এই মাহকাশযাত্রা কিছুটা পিছিয়ে যায়। ২৫ মে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর বিল্ডিংয়ের ছাদে স্যাটেলাইটটির জন্য গ্রাউন্ডস্টেশন উদ্বোধন করা হয়। ৪ জুন বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টার সময় ‘ব্র্যাক অণ্বেষা’ মহাকাশে পাঠানো হয়।
আলোচনায় বেসিস নির্বাচন
দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বেসিসের বছর কেটেছে নির্বাচনের সরগরমে। বছরের শুরু থেকেই নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নেতাদের মধ্যে চলে মতদ্বৈততা, আপিল-অভিযোগ। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও শাখার শুনানি, প্রথম দফায় ৮ জুলাই নির্বাচন বাতিল শেষে এই ইস্যুতে সংগঠনটির গঠনতন্ত্র পর্যন্ত সংশোধন করা হয়। এর পরও দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ২৮ ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়নি।
বেসিস নির্বাচন বোর্ড নভেম্বরের শেষ দিকে সদস্যদের জানিয়ে দেয় যে ৩১ অক্টোবরের ইজিএমে সংশোধিত গঠনতন্ত্র ডিটিওর অনুমোদনের আগে নির্বাচন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনের পুনঃ তফসিল ঠিক সময়ে ঘোষণা করা হবে।