রাখাইন মুসলমান পুরুষদের দাড়ি কেটে কুরআন-হাদিস পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে !

রাখাইন মুসলমান পুরুষদের দাড়ি কেটে কুরআন-হাদিস পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে !


অনলাইন ডেস্কঃ ধর্ম পালনেও ব্যাপক বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলমানরা। প্রকাশ্যে নামাজ পড়া যেত না। মসজিদগুলো হয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, না হয় আগুন দিয়ে কুরআন-হাদিসসহ অন্যান্য বই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি মুসলমান পুরুষদের দাড়ি কেটে ফেলেছে। মেয়েদের বোরকা অথবা ওড়নার মতো এক টুকরো কাপড়ও কেড়ে নেয়া হতো।

এসবই হতো মগ বাহিনীর সদস্যদের প্ররোচনায় রাখাইনদের দ্বারা। অনেক সময় মগ পুলিশ অথবা সেনাবাহিনী এসব কাজ করত। মুসলমানদের এ ধরনের অত্যাচার শুরু হয় বাস্তুচ্যুত করার আগে থেকে। এরপর গত আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুসলমানদের গুলি করে হত্যা করতে শুরু করলে ৫ লাখ রোহিঙ্গা চলে আসে বাংলাদেশে।

বুচিডংয়ের টাইম্যাখালীর সোনামিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা (২৮) এ প্রতিনিধিকে জানান, মগ বাহিনী এবং রাখাইন বৌদ্ধরা আমাদের ধর্মকর্ম ঠিকমতো পালন করতে দিত না। প্রতি পদে আমাদের বাধা দিত। ওরা আমার স্বামী সোনামিয়ার দাড়ি কেটে ফেলেছে, নামাজ পড়তে দিত না। আমিও ওদের নির্যাতনের শিকার। আমাকে বোরকা পরতে বাধা দিয়েছে। এমনকি বোরকা ছেড়ে ওড়নায় শরীর ঢেকে চলাচল করতে চাইলেও রাখাইনরা আমাদের বাধা দিয়েছে। আমাদের ওদের মধ্যে চলতে বাধ্য করেছে।

আপনার স্বামী কোথায়, জিজ্ঞাসা করা হলে মনোয়ারার মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে যায়। মুহূর্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। মুখে কোনো কথা বেরোচ্ছিল না। তার সাথে আসা অন্য এক মহিলা জানান, তার স্বামীকে মগ বাহিনী গুলি করে মেরে ফেলেছে। মগ বাহিনী দেখে দৌড়ে পালানোর সময় পেছন থেকে গুলি করলে তা মাথায় লাগে। মনোয়ারার স্বামী সোনামিয়া সাথে সাথে মারা যান।

বুচিডংয়ের মাওলানা আহমদ উল্লাহও (৪৫) বলেন, শত নির্যাতন সত্ত্বে¡ও আমরা সেখানে থাকতে চেয়েছিলাম। সেখানে আমরা স্বাধীন মতো মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারতাম না। রোজার দিন অনেক সময় জোর করে পানি খাইয়ে রোজা ভাঙাত মগ বাহিনী। ওদের সব ক্ষোভ ছিল আমাদের সন্তানদের ওপর। আমাদের অনেক সন্তান। আমাদের আলেমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি যে আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণ করব, নাকি অনেক সন্তান নেবো। অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে পাপ মনে করেন। এ কারণে এসবের চিন্তা করতে পারেননি রোহিঙ্গারা। তা ছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো কিছুই পাওয়া যেত না সহজে।

মাওলানা আহমদ উল্লাহ জানান, ওদের সন্তান কম। আবার ওরা অনেকেই সন্তান নেয় না, সন্তান হয় না অনেকের। এ কারণে আমাদের সন্তানদের প্রতি ওদের ক্ষোভ অনেক। ওরা মনে করে আমরা ইসলাম ধর্ম পালন করি বলেই আমাদের এত সন্তান। সন্তান বাড়িয়ে দেশ দখল করে ফেলব এটা ওদের ধারণা।

বুচিডংয়ের কৃষক মুমিন আলী (৫৫) বললেন, আমরা ‘মুসলমান’ এটাই আমাদের অপরাধ। আমরা এখানে আসতে চাইনি। শত অত্যাচারের মধ্যেও আমরা সেখানে থাকতে চেয়েছি। বার্মা আমার জন্মভূমি। আমাদের বাবা-দাদা, দাদার বাবাও বার্মায় জন্মেছেন। বার্মাই আমাদের দেশ। অং সা সু চি ক্ষমতায় আসার পর ভেবেছিলাম আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু সু চি আমাদের কোনো সহায়তা করলেন না। আমাদের সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। স্বাধীন মতো কথা বলতে পারতাম না।

বুচিডং থেকে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, আগে থেকেই মগ বাহিনী ও রাখাইনরা আমাদের মসজিদে যেতে বাধা দিত। মসজিদগুলোতে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। গ্রামের দিকে মসজিদগুলো আগেই পুড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের ইমামদের ওরা হত্যা করেছে। কোনো প্রতিকার নেই। কেউ প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসত নির্যাতন। রোহিঙ্গাদের মামলা নিত না পুলিশ। উল্টো রোহিঙ্গাদের ওপরই নির্যাতন করত। পরে ২৫ আগস্টের পর থেকে তো আর রাখঢাক ছিল না। প্রকাশ্যেই আমাদের হত্যা করতে লাগল। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে লাগল। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

Post a Comment

Previous Post Next Post