বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার
জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদিঘী হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রজনগর ও
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মানুষের মাঝে নেই কোন ঈদ আনন্দ। কোরবানির গরু
কেনাবেচার হাটগুলোতে নেই খুব একটা ভীড়। হাওর তীরের মানুষের কাছে কোরবানির
গরু কেনার চেয়ে দু’বেলা দু’মুঠো চালের ব্যবস্থা করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘস্থায়ী
বন্যার কবলে পড়ে ৫ উপজেলায় ৩৫০টি গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ । অকাল বন্যায়
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওরের ১৭ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমির বোরো ধান নষ্ট
হয়েছে। ধান পচে বিষক্রিয়ায়
২৫ মেট্রিক টন মাছ মারা গেছে। সব মিলিয়ে সরকারি তথ্যমতে প্রায় ৯৬ কোটি
টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি হাওর পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকায় প্রভাব
পড়েছে ব্যাপক হারে।
হাকালুকি
হাওর তীরের ভায়াবহ বন্যা শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল তাদের ৯ মে এসেছিলেন
জুড়ী উপজেলায়। আর ৪ জুলাই ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল
হোসেন মায়া এসেছিলেন কুলাউড়া উপজেলায়। দু’জনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শতভাগ
বোরো ফসল হারা হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষের জন্য পরবর্তী ফসল উঠার আগ
পর্যন্ত খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কিন্তু
বাস্তবে এর উল্টোচিত্র দেখা গেছে। বন্ধ হয়েছে ১০ টাকার চাল বিক্রি। এরপর
বন্ধ হয়েছে ওএমএস এর চাল বিক্রি।
হাকালুকি
হাওর তীরের মীরশঙ্কর গ্রামের জামিল হোসেন, শাহাব উদ্দিন, আকুল মিয়া, রাজনা
বেগম জানান, ত্রাণ মন্ত্রী সভা করে মাইকে বললেন, হাওর পাড়ের কেউ না খেয়ে
থাকবে না। মানুষকে ঘর বানিয়ে দেবেন, খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাবেন। এখনতো দেখি
হাওর পাড়ের মানুষের কেউ কোন খোঁজই রাখে না। এখানে সরকারি কিংবা বেসরকারি
ত্রাণ নিয়ে কেউ আসে না।
এপ্রিল
মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া ভয়াবহ বন্যার ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ মাস অতিবাহিত
হতে চলেছে। মানিুষ কতটা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে, সেটা কেবল হাওর পাড়ের
মানুষই বলতে পারবে।
বাদে
ভুকশিমইল গ্রামের আজমল আলী, জাব্দা গ্রামের চিনু মিয়া, চেরাগ মিয়া, বাদশা
মিয়া জানান, প্রতিবছর কোরবানি দেই। এবার আর কোরবানি দেয়া হবে না। ঘরে চাল
নেই। চুলো জ¦লে না। বন্যার পানি। হাওর পাড়ে ঈদ আনন্দ বলতে বন্যার পানির
সাথে লড়াই করা ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে
অব্যাহতভাবে বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা আঞ্চলিক
মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে বড় বাস চলাচল করলেও পানি
বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৪ ঘন্টায় সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে যান
চলাচল।
হাকালুকি
হাওর তীরের ভুকশিমইল ইউনয়িনের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির জানান, গত এক
সপ্তাহ থেকে ভারি বর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আবারও
বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে। দু’টি পরিবার ভুকশিমইল সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিন যে হারে পানি বাড়ছে আশ্রিতের সংখ্যা আরও
বাড়বে ঈদের আগে। মানুষ বসবাস যেখানে দুষ্কর হয়ে পড়েছে, সেখানে কোরবানি আর
ঈদের আনন্দ বলতে হাতাশা ছাড়া আর কিছু নয়।