রোহিঙ্গা নিধনের পক্ষে ছিলেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা

রোহিঙ্গা নিধনের পক্ষে ছিলেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা

অনলাইন ডেস্কঃ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরো বিশ্ব। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এমন বর্বর নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
তবে অভিযোগ উঠেছে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে 'মুসলিম নিধন'-এর পক্ষে কাজ করেছেন সেখানকার জাতিসংঘেরই কর্মকর্তা রেনাটা লক ডেসালিয়েন।

এ ব্যাপারে বিবিসি বাংলা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে মিয়ানমারে জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা রোহিঙ্গা সংকটে যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তা নিয়ে তার সহকর্মীরাও প্রশ্ন তুলেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও মিয়ানমারে জাতিসংঘ দফতর বিবিসির এই রিপোর্টে উঠে আসা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কানাডার নাগরিক রেনাটা লক ডেসালিয়েনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের এলাকায় মানবাধিকার কর্মীদের যেতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা, এ নিয়ে জনমত গড়ে তোলার কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করা, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের চেষ্টার ব্যাপারে সতর্কবাণী দিয়েছেন যেসব কর্মকর্তা, তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা করা।

মিয়ানমারে কাজ করেছেন এমন একজন ত্রাণ কর্মকর্তা ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি জানিয়েছেন, ‘মিয়ানমারে একদল বিদেশি এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা এবং রাখাইন বিষয়ে কথা বলছিল। আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে একজন বার্মিজ বলল, রোহিঙ্গারা যদি কুকুরের মতো হয় ওদের সবাইকে মেরে ফেলা উচিত। কোনো সমাজে যখন একটি গোষ্ঠীকে আর মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয় না এবং সেটি যখন সমাজে স্বাভাবিক ব্যাপার বলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায়, আমার কাছে এটাই জাতিগত নির্মূল শুরুর একটা আলামত। ’

ক্যারোলাইন ভ্যানডেনাবিলি আরও জানান, তাকে সবসময় নির্দেশনা দেয়া হতো বৈঠকগুলো যেন এমন সময়ে আয়োজন করা হয় যখন ইউএনওসিএইচএ'র প্রতিনিধি শহরে থাকবেন না। তাকে গণ্ডগোল সৃষ্টিকারী বলে চিহ্নিত করা হয় এবং রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলের আশংকা নিয়ে বারবার সতর্ক করায় তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে মিজ ভ্যানডেনাবিলি যেসব ঘটনা বর্ণনা করেছেন, জাতিসংঘ তার কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলতে মিয়ানমার সফরে যাওয়া জাতিসংঘ কর্মকর্তাদেরও বারণ করা হতো।

এছাড়া টমাস কুইনটানা নামের জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক এক কর্মকর্তা অভিজ্ঞতায় বলেছেন, ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে একবার তার দেখা হয় রেনাটা লক ডেসালিয়েনের সঙ্গে। তিনি  (রেনাটা) আমাকে পরামর্শ দিলেন, আপনার উত্তর রাখাইনে যাওয়া উচিত হবে না - দয়া করে ওখানে যাবেন না। আমি তখন জানতে চাইলাম, কেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না। তার অবস্থানটা ছিল এ নিয়ে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ঝামেলায় তিনি যেতে চান না।

‘এটা মাত্র একটা ঘটনা। কিন্তু এ থেকে বোঝা যায় রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমারে অবস্থানরত জাতিসংঘ দলের কৌশলটা কী ছিল। ’ -যোগ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকর্তা টমাস কুইনটানা।

এ ব্যাপারে একটি সূত্র বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে যেভাবে মিয়ানমারে জাতিসংঘ কাজ করেছে, তার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।

Post a Comment

Previous Post Next Post