বিয়ানীবাজারে প্রথমবারের মতো পেট না কেটে পিত্তথলির পাথর অপসারণ

বিয়ানীবাজার প্রতিনিধিঃ সিলেটের বিয়ানীবাজারে এই প্রথম ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে পেট না কেটে কেবল ছিদ্র করে পিত্তথলির পাথর অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে পৌরশহরের হাসপাতাল রোডের রয়েল কমপ্লেক্স-এ অবস্থিত আলফা পলি ক্লিনিকে এ অপারেশন করা হয়।

সিলেট নর্থ-ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক জেনারেল ও ল্যাপারস্কোপিক বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মামুন ইবনে মুনীম এর তত্ত্বাবধানের ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম এ অপারেশনে অংশ নেয়। এতে প্রধান সহকারি সার্জন ছিলেন ডা. আবু ইসহাক আজাদ, ডা. নিলয় ভট্টাচার্য। এনেস্থেশিয়ায় ছিলেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেস্থেশিয়া বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিদ আহমদ তুহিন।

প্রায় ৪৫ মিনিটে অত্যাধুনিক ল্যাপারোস্কপি মেশিনের সাহায্যে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের সুপাতলা গ্রামের বাসিন্দা রোগী আসমা বেগম (২৮)’র পিত্তথলির পাথর সফলভাবে অপসারণ করা হয়।

ডা. মামুন ইবনে মুনীম বলেন, প্রথাগত ওপেন সার্জারি থেকে ল্যাপারোস্কপিক সার্জারিতে বিশেষ সুবিধা রয়েছে। অপারেশন পরবর্তীতে ওপেন সার্জারির রোগীরা যে পরিমান ব্যাথা ভোগ করেন ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে রোগীরা অনেক কম ব্যাথা অনুভব করে থাকেন। তাছাড়া ওপেন সার্জাারিতে বড় কাটা দাগ থাকে অথচ ল্যাপারোস্কপিক সার্জারিতে খুই ছোট দাগ থাকে এবং পরবর্তীতে কোনো দাগই থাকে না। তিনি জানান, এ সার্জারির পর রোগীকে হাসপাতালে ২/৩ দিন থাকলেই চলে, পাশাপাপাশি ওপেন সার্জারিতে প্রায় ৮/১০ দিন থাকতে হয়। এছাড়া তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে কাজে যোগদান করা যায়।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু ইসহাক আজাদ বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। পেট না কেটে শুধু মাত্র কয়েকটি ফুটো করে ছোট ক্যামেরা ও অন্য্যান্য যন্ত্র প্রবেশ করে এ অপারেশন করা হয়।

তিনি জানান, ‘বাংলাদেশে উপজেলা পর্যায়ে এরকম আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা আর কোথাও রয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’

 ডা. আবু ইসহাক আজাদ অত্যান্ত পরিস্কার করে বলেন- এই অপারেশনে সম্পূর্ণ পিত্তথলি অপসারণ করে ছিদ্রপথে বের করে আনা হয়; সুতারাং পাথর থেকে যাওয়া কিংবা নতুন পাথর জমা হওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না।

এদিকে ঐদিন সন্ধ্যায় ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে বিয়ানীবাজারের নিদনপুর গ্রামের বাসিন্দা আইজুন বেগম (৬০)'র এপেন্ডিসাইটিস ও উপজেলার মাথিউরা গ্রামের নুরুন নাহার (৪৫)’র পিত্তথলির পাথর অপসারণ  করা হয়।

রোগী নুরুন নাহার (৪৫)’র মেয়ে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুনা বেগম বলেন, বিয়ানীবাজারে এরকম আধুনিক মানের সেবা পেয়ে সত্যিই আমরা অনেক বেশি আনন্দিত।

বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান বলেন, বিয়ানীবাজারে উপজেলা পর্যায়ে বেসরসকারিভাবে  ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে এরকমের অপারেশন করা হচ্ছে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং শুভ উদ্যোগ। এতে করে স্থানীয় এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলার রোগীদের সিলেট কিংবা ঢাকা যাওয়ার ভোগান্তি অনেকখানি কমবে।

তিনি বলেন, এ ধরণের সুযোগ-সুবিধা আমাদের সরকারি হাসপাতালে শুরু করতে পারলে অনেক বেশি ভালো হতো।

Post a Comment

Previous Post Next Post