অন্যের বই পড়ে জিপিএ-৫ পাওয়া রাবেয়া কি ভর্তি হতে পারবে?

কুলাউড়া প্রতিনিধি :বাবা দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাক। তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময় ২ বোন ও ১ ভাই রেখে মা হাজেরা বেগম মারা যান। পরে বাবা আরেক বিয়ে করেন। এখন ঘরে সৎমা। সৎমায়ের ঔরসে আরও ৩ ভাইয়ের জন্ম। ৮ সদস্যের পরিবারের খরচ ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়া চালানো সম্ভব নয় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রামেসশরপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুর রাজ্জাকের পক্ষে। নুন আনতে পানতা পুরায় অবস্থা তার। এরপরেও হাল ছাড়েনি রাবেয়া। খেয়ে না খেয়ে চালিয়ে গেছে লেখাপড়া। দারিদ্র্যতার কাছে হার মানেনি সে। অদম্য মেধাবী রাবেয়া বেগম আব্দুর রাজ্জাকের বড়ো মেয়ে। সে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় পতনউষার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। রাবেয়া জানায়- বাবার অর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় গাইড বই কিনে দেয়া সম্ভব হয়নি। প্রতিবেশি চাচাতো বোন ও সহপাঠী তাহেরা ইয়াসমিনের বই এনে পড়তাম আবার মাঝে-মধ্যে তাদের বাড়িতে গিয়েও লেখাপড়া করি। সহপাঠীরা খাতা, কলম ও বই সময় মতো পেলেও এগুলো আমার ভাগ্যে জুটেনি। অনেক সময় অন্যের খাতা ধার করে লিখেছি। মাঝে-মধ্যে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে খাতা-কলম কিনতাম। সহপাঠীরা সারা বছর স্কুলের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়লেও টাকার অভাবে তার পক্ষে পড়া সম্ভব হয়নি। রাবেয়াদের বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে পতনঊষার উচ্চ বিদ্যালয়। ২ কিলোমিটার যাওয়ার পরে সিএনজিচালিত অটোরিক্সায় ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও রাবেয়া টাকার অভাবে প্রতিদিন ৫ কিলোমটিার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতো। মেধাবী রাবেয়া পিএসসি পরীক্ষায় ৩.৭৬ ও জেএসসি পরীক্ষায় ৩.২৮ পেয়ে উক্তীর্ণ হয়েছে। পিএসসি এবং জেএসসির তুলনায় এসএসসিতে ভালো ফলাফল করার কারণ জানতে চাইলে রাবেয়া জানায়- জেএসসি পরীক্ষার সময় আমি অসুস্থ থাকায় ভালো ফলাফল করতে পারিনি। তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এসএসসি পরীক্ষায় আমাকে ভালো ফলাফল করতেই হবে। তখন থেকেই আমি নিয়মিত লেখাপড়া শুরু করি। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে রাবেয়া জানায়- আমার দিনমজুর বাবা, মা এবং প্রতিবেশিদের মুখে হাসি ফোটানোই ছিলো আমার লক্ষ্য। এজন্য আমি সময় নষ্ট না করে নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যাই। ফলাফলের পেছনে তার মা-বাবা ও প্রতিবেশিদের অবদান অনেক স্বীকার করে সে জানায়, স্কুলের শিক্ষক আবু সুফিয়ান স্যার তাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছেন। এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার জন্য রাবেয়ার বাবার কাছে কোনো টাকা নেই। কিন্তু তার এ ফলাফলে আনন্দিত হয়ে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসছেন। ভবিষ্যতে একজন আদর্শ শিক্ষক হয়ে দেশ ও জাতি গড়ার কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে আগ্রহী রাবেয়ার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন কি কেউ?

Post a Comment

Previous Post Next Post