নিউজ ডেস্কঃ
হাওরের পানিদূষণে ৪১ কোটি টাকার এক হাজার ২৭৬ টন মাছ মরে গেছে। এ ছাড়া
মারা গেছে তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস। পানিতে অক্সিজেন একেবারেই কমে যাওয়ায় এবং
অ্যামোনিয়া ও এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাছ মরে গেছে।
সোমবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে হাওরের মাছের পরিস্থিতি-সম্পর্কিত মৎস্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
হাওরের
পানিতে ধানগাছ পচার কারণে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন তৈরি হয়েছে। এর ফলে
এবার মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা গেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, গত ১৭ এপ্রিল মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মৎস্য গবেষণা
ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা নেত্রকোনা জেলার ডিঙ্গাপোতা হাওর পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে তারা হাওরের পানি পরীক্ষা করেছেন।
পরীক্ষায়
জানা গেছে, পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল দশমিক শূন্য ১ থেকে দশমিক ৮
পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন), যা স্বাভাবিক মাত্রার (৫ থেকে ৮ পিপিএম) চেয়ে
খুবই কম। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ ছিল দশমিক ৪ থেকে দশমিক ৬ পিপিএম। অ্যামোনিয়ার
লিথাল মাত্রা ছিল দশমিক ২ পিপিএম। দেশের অন্যান্য হাওরে একই সময়ে দ্রবীভূত
অক্সিজেনের পরিমাণ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৫ পিপিএম এবং অ্যামোনিয়ার পরিমাণ
দশমিক ৫ থেকে দশমিক ৮ পিপিএম। পিএইচের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক শূন্য থেকে ৬
দশমিক শূন্য পর্যন্ত, যা সহনীয় পর্যায়ের (৬ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫) নিচে
ছিল।
প্রতিবেদেন
বলা হয়, হাওরের পানিতে ধানগাছ পচার কারণে প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটন
বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় হাওরে মাছের পোনা আগাম অবমুক্ত করা হলে প্লাঙ্কটন
খেয়ে মাছ সহজেই বড় হবে। একই সঙ্গে আগাম বৃষ্টির কারণে হাওরে পানি চলে আসায়
এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মাছ বাড়বে। হাওরে মাছের উৎপাদন অন্যবারের চেয়ে
বেশি হবে। এরই মধ্যে মাছের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পানির গুণাগুণ উন্নয়নের ফলে জলাশয়গুলোতে বর্তমানে
গড় পিএইচ ৭ দশমিক শূন্য পিপিএম, অক্সিজেন ৫ দশমিক শূন্য পিপিএম এবং
অ্যামোনিয়া দশমিক ১ থেকে দশমিক ৫ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এটি স্বাভাবিক
হতে কিছু সময় লাগবে।
প্রতিবেদনে
বলা হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের
সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ২২ থেকে ২৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার
বিভিন্ন হাওর এবং মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে
জানতে পেরেছে, বর্তমানে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছে, যা মাছের
জন্য ক্ষতিকর নয়।
কর্মকর্তাদের
পরিদর্শনকালে অনেক মৃত মাছ মুখ খোলা অবস্থায় দেখা যায়। এ ছাড়া মাছের ফুলকা
ছেঁড়া অবস্থায় ছিল। এভাবে মৃত্যু প্রমাণ করে, অক্সিজেনের মারাত্মক ঘাটতি
ছিল। সার্বিক দিক পর্যালোচনায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা
হয়, হাওরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের অস্বাভাবিক ঘাটতি এবং অ্যামোনিয়ার
বৃদ্ধির কারণে মাছের ব্যাপক মড়ক হয়েছে।
এবার
মাছ উৎপাদনে প্রভাব পড়বে কি-না এ প্রসঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেছেন, দেশে মোট ৩৯ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে এক
হাজার ২৭৬ টন মাছ মরে যাওয়ায় তা তেমন প্রভাব ফেলবে না। তাই আশঙ্কার কারণ
নেই।
হাওরের
পানির গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য এরই মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর আট লাখ টাকা ব্যয়ে
পানিতে চুন ও জিওলাইট প্রয়োগ করেছে। গত তিন-চার দিনের বৃষ্টিতে হাওরের
পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমে বাড়ছে।