ইমাদ উদ দীন:
গো খাদ্য সংকটে পড়েছেন হাওর পাড়ের কৃষক। গেল ক’দিন থেকে এ সংকট তীব্র
হচ্ছে।হাওর তীরের কৃষকরা গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বোরো ধান আর মাছ
হারিয়ে যেমন তাদের নিজেদের খাদ্য নেই। তেমনি উপুস থাকছে তাদের গরু,মহিষ ও
ছাগল। আর হাঁস, মোরগও।
এবছর
হঠাৎ উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় জেলার সব
কটি হাওরের বোরো ফসল। জলাবদ্ধতার কারনে বোরো ধান পচে পানি দূষিত হয়ে মারা
যায় মাছ, জলপ্রাণি ও ঘাস। এরই সাথে মরে যায় সোনালী ফসলকে ঘীরে দেখা কৃষকের
স্বপ্ন। সব হারিয়ে হাওর পাড়ের চাষী ও জেলেদের এখন শুধুই হাহাকার। গেল ক’দিন
থেকে গো খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করায়। আর ধান রোপনের সময় মহাজন ও এনজিও
সংস্থার কাছ থেকে ঋণ আনায় পাওনাদারদের তাগিদ আসছে বার বার। তাছাড়া মৌসুমেও
ঘরে এক সের ধান না থাকায় অভাবের তাড়নায় নিজেদের সংসার চালাতে অনেকটা লোকসান
দিয়েই বিক্রি করছেন তাদের গরু,মহিষ ও ছাগল। শেষ সম্বল এই গৃহ পালিত পশু
গুলো বিক্রি করে আগামীতে ক্ষেতের জমি চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আহাজারি করছেন
চাষীরা।
জেলার
হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর পাড়ের কৃষকরা হাওরের বোরো ধানের ওপর যেমন
নির্ভরশীল তেমনি তাদের পালিত গুরু মহিষের পুরো বছরের খাবারের ব্যবস্থা হয়
এই ধানের তুষ (কুড়া,গুড়া) আর খড় থেকে। তুষ (কুড়া,গুড়া) থেকে খাদ্য হয় মোরগ ও
হাঁসেরও। কিন্তু এবার হাওর তাদের ঠকিয়েছে। হঠাৎ রাক্ষুসি হয়ে হাওর গিলে
খেয়েছে বোরো ফসল আর সেই সাথে মাছ, জলজ প্রাণি ও উদ্ভিদ। মানুষের খাদ্যের মত
গ্রাস করেছে গো-খাদ্যও। তাই হাওর পাড়ের কৃষক পরিবার গুলো নিজেদের খাদ্যের
পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে এখন চরম বিপাকে পড়েছেন।
হাকালুকি
হাওর পাড়ের গৌড়করন গ্রামের কৃষক মোস্তফা মিয়া ৩ একর জমিতে বোরো ধান ফলিয়ে
ছিলেন জমির সব ধান তলিয়ে গেছে ঢলের পানিতে। এখন ধানও নেই খড়ও নেই। তার ৫টি
গরুর মধ্যে ৪টিই বিক্রি করেছেন। অন্যটিরও দামদর চলছে। উত্তর সাদিপুর
গ্রামের কৃষক সালাম মিয়া জানান, চারদিকে পানি থাকায় তার ৬টি গরু নিয়ে
বিপাকে পড়েছেন। থাকার জায়গা আর খাদ্য সংকটের কারনে তা বিক্রি করতে চাচ্ছেন।
মহেশগৌরি গ্রামের কৃষক মধু মিয়া বলেন আমাদের খাদ্য নেই গরু গুলোরও খাদ্য
নেই। তার ১১টি গরুর মধ্যে বিক্রি করেছেন ৩টি। বাকী ৩টি বিক্রি করবেন ও ৫ টি
আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে পাঠাবেন আপদকালিন সময়ের জন্য।
মীরশংকর
গ্রামের কৃষক তাজউদ্দিন ও সাদিপুর গ্রামের কৃষক বেলাল মিয়া জানালেন তাদের
সবকটি গরু লোকসান দিয়েই বিক্রি করেছেন। হাওরে থইথই পানি। আশপাশে রাখার মত
কোন জায়গা নেই। তাই গেল সপ্তাহ দিন থেকে বাড়িতে গরু গুলি এক ঘরে বন্ধী। ঘাস
নাই খড় নাই। তাদের ক্ষুধার জ্বালার হাক ডাক ভালো লাগেনা। অন্য কোথাও থেকে
যে খড় কিনব সেই টাকাপয়সাও নাই। নিজে খাইতে পারছিনা আর গো খাদ্য কিনব কি
ভাবে। ওদের আর না খাইয়ে রাখতে চাইনা। পোষা প্রাণি গুলোর এমন কষ্ঠ সহ্য হয়
না তাই বিক্রি করে দিলাম। অন্য গৃহস্তের ঘরে গিয়ে যাতে তারা শান্তিতে থাকে।