হাকালুকি তীরের মানুষের আর্তনাদ; ফসল রক্ষায় নেই সরকারী উদ্যোগ

হাকালুকি তীরের মানুষের আর্তনাদ; ফসল রক্ষায় নেই সরকারী উদ্যোগ
এ কে এম জাবের: এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের বোরোসহ অন্যান্য ফসল পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষায় সরকারি কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় প্রতি বছরই ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। নিজের জমি ও অনেক পরিশ্রমে ফলানো অনেক সাধের বোরো ধান হারিয়ে অনেকটা নির্বাক অসহায় হয়ে পড়েছেন হাকালুকি তীরের কৃষকেরা। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় হাকালুকি হাওর তীরের বিভিন্ন এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। চলতি বছরের গত মার্চ মাসের শেষ দিকে এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ধান তলিয়ে যায়। এরপর বৈশাখী ঝড়ে পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাকলুকি জুড়ে। আধাপাকা ধান পঁচে যাওয়ায় পানিতে দ্রবিভুত অক্সিজেন কমে যাওয়ায় ও আ্যামোনিয়া প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় হাকালুকিতে ব্যাপক হারে বড় মাছসহ পোনা মাছ মারা যায়। মরা মাছ ও পানি খেয়ে অনেক হাঁসও মারা যায় হাকালুকিতে। ধান ও মাছ পঁচার দুর্গন্ধে ভারি হয়ে ওঠে হাকালুকির বাতাস। ধানের পর মাছ এবং হাঁস মারা যাওয়ায় খড়গ নেমে আসে হাকালুকি তীরের মানুষদের ওপর। আর্তনাদ ছাড়া আর কিছু করার নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা পেলে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে কৃষক ও জেলেদের দাবি ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে হাওরের ফসল রক্ষাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে কৃষক সমিতি ও ক্ষেতমজুর সমিতি গত সোমবার বিকেলে কুলাউড়ার ইউএনওর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়।

হাকালুকি তীরের মানুষের আর্তনাদ; ফসল রক্ষায় নেই সরকারী উদ্যোগ
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়, প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের আয়তন প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর। এটি দেশের বৃহত্তম হাওর। কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা ছাড়াও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার কিছু এলাকাজুড়ে এ হাওরটি বিস্তৃত। এ বছর মার্চ মাসের শেষ দিকে টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শুধু কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় হাওর তলিয়ে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার কাঁচা ও আধা পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন ২৬ হাজার কৃষক। এর আগে ২০১০ সালে এপ্রিল মাসের দিকে একইভাবে আগাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গিয়েছিল। হাওরের বিভিন্ন এলাকা প্রায় ছয় মাস জলাবদ্ধ ছিল। হাওরটির ফসল রক্ষায় ১৯৮২ সালের দিকে পাউবো একটি সেচ প্রকল্পের প্রস্তুতি নিয়েছিল। তখন মাছ চাষ ব্যাহত হওয়ার কারণ দেখিয়ে পরিবেশবিদ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা আপত্তি জানালে প্রকল্পটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কৃষক সমিতি ও ক্ষেতমজুর সমিতির দেওয়া স্মারকলিপিতে হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, ফসল রক্ষায় পলিতে ভরাট হয়ে পড়া নদ-নদী ও খাল পুনঃখনন, বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং হাওরের বিল (জলমহাল) ইজারা প্রথা বাতিলসহ ১০ দফা দাবি উল্লেখ করা হয়।

ক্ষেতমজুর সমিতির কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোশারফ আলী বলেন, হাকালুকি হাওরে কোটি কোটি টাকার বোরো ধান উৎপাদিত হয়। আগাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের ফসল নষ্ট হয়। কৃষকদের সর্বনাশ হয়। অথচ এ হাওরের বোরো ধান ও অন্যান্য ফসল রক্ষায় সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এটা হাওর অঞ্চলের মানুষকে পীড়িত করে। হাওরপারের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সদয় হবেন। 

Post a Comment

Previous Post Next Post