সে কি আপনার জন্য ঠিক মানুষ?

সে কি আপনার জন্য ঠিক মানুষ?
অনলাইন ডেস্কঃ তানজিয়া মিনহাজের (ছদ্ম নাম) সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন আট মাস হলো। প্রথম দিকে সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। একপর্যায়ে মনে হয়েছে যে মিনহাজ তাঁর জন্য সঠিক মানুষ নন। দুজনের প্রত্যাশা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বিস্তর তফাত। তানজিয়ার মনে হয়েছে, তাঁর আগ্রহ ও মতামতের প্রতি মিনহাজের যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধও নেই। প্রতিটি বিষয়ে দেখা যায় বোঝাপড়ার অভাব। তাঁকে জীবনসঙ্গী হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করাটা সম্ভব হয়ে উঠবে না। মিনহাজের প্রতি তাঁর মানসিক যুক্ততা যথেষ্ট থাকা সত্ত্বেও তাঁর প্রতি আবেগের চেয়ে প্রাধান্য দিতে চান যৌক্তিক বিষয় ও বাস্তবতাকে।

যদিও প্রতিটি সম্পর্কে ওঠানামা, বাধাবিপত্তি খুব স্বাভাবিক বিষয়; তারপরও দুজনের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব হয়। কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধার অভাব মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সম্পর্ক অনুকূলে থাকে না। তখন তানজিয়ার মতো অনেকেই সন্দেহ করেন, সম্পর্কটি ঠিক পথে এগোচ্ছে তো? সম্পর্কে যে জটিল জটটি রয়েছে, তা কি সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব? কিংবা যখন সঙ্গীকে নিয়ে আপনার জীবন যেভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন, সেটা কি সম্ভব হবে?
এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া স্বাভাবিক। সম্পর্কে জড়ানোর পর প্রশ্ন উঠতেই পারে আপনি সঠিক মানুষের সঙ্গে আছেন কি না। তখন ভেতরে ভেতরে দানা বাঁধতে পারে আবেগ ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব। এমন সময় কী করা উচিত?
এ নিয়ে কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক মো. আজহারুল ইসলামের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে সম্পর্কটি একই সঙ্গে মানসিক প্রশান্তি ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করছে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। আপনি ঠিক মানুষের সঙ্গে রয়েছেন কি না, তা জানতে হলে আগে নিজেকে বুঝতে হবে। এ জন্য নিজের আগ্রহ, মূল্যবোধ, মনোভাব ও চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারগুলোতে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ থাকা প্রয়োজন। নিজেকে সঠিকভাবে জানলেই বোঝা যাবে আমার জন্য সঠিক মানুষ কে? নিজেকে সঠিকভাবে জানার পাশাপাশি প্রয়োজন সঙ্গীকে ভালোভাবে জানা। কেননা, শুধু বাইরের বিষয়গুলো দিয়ে কাউকে সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না।
আজহারুল ইসলাম বললেন, আবেগ ও বাস্তবতার দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের উচিত সময় নেওয়া। বিষয়গুলো বারবার যাচাই করে নিজের অবস্থান ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর উপায় হতে পারে কোন রকম দোষারোপ করা ছাড়াই পরস্পরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা, যাতে দুজন দুজনকে ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
নিজেকে ও সঙ্গীকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে দুজনের আগ্রহ, প্রত্যাশা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো ভালোমতো জানতে হয়। এসব ক্ষেত্রে সঙ্গীর সঙ্গে সামান্য অমিল বা বোঝাপড়ার অভাব থাকলে হয়তো মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব; কিন্তু সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সেটি কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা বিবেচনায় আনতে হবে। পাশাপাশি দুজনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দুজন কতটুকু মানিয়ে নিতে সক্ষম, তা ভেবে দেখাটা জরুরি। একই সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে জীবনের অন্যান্য কাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে কি না, তা ভাবতে হবে।
আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বা নিজস্বতার প্রতি সঙ্গীর শ্রদ্ধাবোধ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে সঙ্গী মতামত বা আগ্রহের বিষয়গুলোতে উদাসীন থাকলে বা অবজ্ঞা করলে সম্পর্ক সঠিক পথে আগায় না। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা বজায় রেখে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। আপনার বৈশিষ্ট্য বা আগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে শুধু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে অনেক কিছুই লুকানো বা মিথ্যা বলার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তা জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ক্ষেত্রে দুজনকেই নিজের অবস্থানটি ভালোমত বিবেচনায় আনতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই আপনার বিষয়গুলোর প্রতি সঙ্গীর শ্রদ্ধা ও মূল্যয়ন আশা করেন, তেমনি সেই ব্যক্তিও আপনার কাছে এমন প্রত্যাশা করেন। সে ক্ষেত্রে আপনি তাঁর প্রত্যাশার বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তো? নাকি শুধু তাঁর অবস্থানটিই বিবেচনায় আনছেন? এসব কিছু বিবেচনা করেই সিদ্ধান্তে আসা উচিত আপনার সঙ্গী সঠিক মানুষ কি না। জীবন আপনার, সিদ্ধান্ত আপনার হাতেই।

Post a Comment

Previous Post Next Post