নিজের বাড়ি পুড়ে যাওয়ার মামলার আসামী হলেন তারা!

নিজের বাড়ি পুড়ে যাওয়ার মামলার আসামী হলেন তারা!
স্টাফ রিপোর্টারঃ হঠাৎ মানুষের দৌড়ঝাঁপ। চারিদিকে ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার চেঁচামেচি। তখন দুপুর ১টা ১৫ মিনিট। শুক্রবার থাকায় বাড়ির পুরুষরা মসজিদে জুম্মা’র নামাজে অবস্থান করছেন। পুরুষশূন্য বাড়িতে মহিলাদের আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসলেন। খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসে। নামাজ শেষে বাড়ির পুরুষরা খবর পেয়ে দৌড়ে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে ঘর বাড়ি পুড়ে ছাঁই। স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, সম্পত্তির দলিল-দস্তাবেজ, জরুরী কাগজপত্র, এসএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্রসহ কিছুই বাকি নেই। চোখের সামনে শুধুই আগুনের লেলিহান শিখা। বাকরুদ্ধ বাড়ির মালিক দুদু মিয়া, আকমল হোসেন চিনু মিয়া ও তাদের সৎবোন ফারজানা ইয়াছমিন খেলু। তাদের চোখে মুখে অসহায়ত্বের করুণ দৃষ্টি।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া তথ্যমতে এমন দৃশ্য দেখা যায় কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের উসমানপুর গ্রামে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে ওই অগ্নিকা-ে বাড়ির মালিকদের প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

দিনব্যপি দর্শনার্থিদের যাওয়া আসা, শান্তনার কোন বানীই তাদের বাড়ির মালিকদের বুকের হাহাকার থামাতে পারছিলো না। এমন এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহবাব চৌধুরী শাহাজান ও কুলাউড়া থানার এসআই সঞ্জয় চক্রবর্তী। তাদেও পরামর্শ দিয়েছিলেন ফারজানা ইয়াছমিন খেলু ও তার পরিবারের সদস্যদের দুদু মিয়ার আরেকটি অবশিষ্ট ঘরে থাকার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। চেয়ারম্যান ও এসআই সঞ্জয় চক্রবর্তী ফিরে আসার পর ফারজানা আক্তার খেলুকে নিজের অবশিষ্ট ঘরে আশ্রয় দেন তারই সৎভাই দুদু মিয়া।

পরদিন শনিবার ২৫ ফেব্রুয়ারী পাল্টা চিত্র। যাদের ঘর পোড়ে ৬০ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে সেই দুদু মিয়া, তার ছেলে আকবর হোসেন রাজন, আকমল হোসেন চিনু মিয়া, আলমগীর হোসেন সুমেল এর উপর কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীদের সৎবোন ফারজানা ইয়াছমিন খেলু । ওই দিন সকালে মামলা দায়েরের পর বিকালে মামলা এফআইআর হয়ে যায়। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ভিটা বাড়ি ছাড়া মামলার আসামী হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদেরকে।

জানা যায়, দুদু মিয়া, আকমল হোসেন চিনু মিয়া ও তাদের সৎবোন ফারজানা ইয়াছমিন খেলুর মধ্যে দির্ঘদিন যাবৎ সম্পত্তিগত মামলা মোকাদ্দমা চলছে। মামলা উচ্চ আদালতেও চলমান। এমনি অবস্থায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই মামলা করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এবিষয়ে উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার আতিকুল ইসলাম তপন জানান, শুক্রবার দুপুর ১ টা ৩৫ মিনিটে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি গাড়ি গিয়ে বরমচালের উসমানপুরের বাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে আগুনের সূত্রপাত বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে হয়েছে।

এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারী দুপুরে দুদু মিয়া, তার ছেলে আকবর হোসেন রাজন নিজের বাড়ি পুড়ে যাওয়ার মামলার শিকার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে তদন্ত করে তাদেরকে ষড়যন্ত্রকারীর কবল থেকে বাঁচানোর জোর দাবি জানান।  

মামলার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা (পিপিএম) জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post