লেবাননের সমুদ্র পাহারায় বাংলাদেশি নৌবাহিনী

লেবাননের সমুদ্র পাহারায় বাংলাদেশি নৌবাহিনী
অনলাইন ডেস্কঃ ভূমধ্যসাগরের পাড়ে অবস্থিত অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত সমৃদ্ধ দেশ লেবাননের সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় এবং ইসরায়েলি আগ্রাসন প্রতিরোধে কাজ করছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। জাতিসংঘ মেরিটাইম টাস্কফোর্সের আওতায় ২০১০ সাল থেকে লেবাননে দুটি যুদ্ধজাহাজ নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশ জয় করছে নৌবাহিনীর ২৭০ সদস্য। রাডার ও মিসাইল বহনকারী এত বড় যুদ্ধজাহাজ লেবাননের নেই। তাদের  নৌবাহিনীর শক্তি-সামর্থ্যও সীমিত। এজন্য বাংলাদেশকে আলাদা সমীহের চোখে দেখে সাধারণ লেবাননিরা ও তাদের সরকার। বাংলাদেশ নৌবাহিনী লেবাননের সমুদ্রসীমায় চোরাচালান রোধ, অনাকাঙ্ক্ষিত জাহাজ চিহ্নিত করা, প্রয়োজনে অপারেশনে সহায়তা করাসহ বিভিন্নভাবে লেবানন সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। ফলে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিকের দেশটিতে গত কয়েক বছরে বাংলদেশকে নতুন করে চিনছে লেবানিজরা।

প্রথম ২০১০ সালে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘ওসমান’ ও ‘মধুমতি’ লেবাননের শান্তি রক্ষা মিশনে (ইউনিফিল) অংশ নেয়। জাতিসংঘের পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা নিয়ে ভূমধ্যসাগরে টহল দিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ইসরায়েলের জলসীমার কাছে নিয়মিত মহড়ায় অংশ নেওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের নাম। লেবাননিরা জানতে পারে তাদের জলসীমার নিরাপত্তা দিতে এসেছে বাংলাদেশ। যারা শুধু গৃহকর্মীর কাজই করে না, অন্য দেশের নিরাপত্তায়ও কাজ করে। শনিবার লেবাননের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যের বৈঠকেও এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমরা শুধু তোমাদের দেশে নারী গৃহকর্মীই পাঠাই না, আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি স্পেশালিস্ট পাঠিয়ে সার্ভিস দিচ্ছি। আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেগুলোতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে। আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো বিশ্বের ১০৮টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে তোমাদের সহায়তা দিতে পারি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৯৯৩ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ২০১০ সালে যুদ্ধজাহাজ ওসমান ও মধুমতি নিয়ে লেবাননে আসে নৌবাহিনী। বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছে ‘আলী হায়দার’ ও ‘নির্মল’। বর্তমানে লেবাননে ৬টি দেশ জাতিসংঘ মেরিটাইম টাস্কফোর্সের হয়ে কাজ করছে। বাকি পাঁচটি দেশের একটি করে যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। শুধু বাংলাদেশের রয়েছে দুটি জাহাজ।

বছরে দেড়শ কোটি টাকা আয় : লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করে বছরে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এর মধ্যে ৭৭ কোটি টাকা জাহাজের জন্য, ট্রুপসদের জন্য ৪৬ কোটি টাকা, স্টাফ রক্ষণাবেক্ষণ ১২ কোটি টাকা। যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে সমুদ্রপথ পাহারা দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী এ দেশের মানুষের কাছে নতুন ভাবমূর্তি নিয়ে হাজির হয়েছে।

জানা গেছে, লেবাননের বিভিন্ন দুর্যোগে সাহসিকতা দেখিয়েছে নৌবাহিনী। শীত মৌসুমে লেবাননে প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকে দুর্যোগময়। এ সময় সাধারণ জলসীমার নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকে না। পুরো সাগর নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। সাগর থাকে উত্তাল। কিন্তু সেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইউনিফিলে অংশ নেওয়া উন্নত দেশের নৌবাহিনী নিরাপদে আশ্রয়ে চলে গেলেও দায়িত্ব অব্যাহত রাখে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমধ্যসাগরে নিয়মিত টহল দিয়ে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছে নৌবাহিনীর সদস্যরা। বিষয়টি লেবাননের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সাড়া ফেলে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তা আরাফাত বলেন, আমরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা অপারেশনে থাকি। এক মুহূর্তের জন্যও আমাদের অপারেশন বন্ধ হয় না। এজন্য আমাদের প্রতি লেবানন সরকার ও জাতিসংঘের অনেক বেশি নির্ভরতা। লেবাননের নৌবাহিনীকেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর সদস্যরা। লেবাননে বাংলাদেশের হাইকমিশন খোলা হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী শান্তি রক্ষী মিশনে অংশ নেওয়ার পর। এর আগে এখানে কোনো দূতাবাস ছিল না। নৌবাহিনীর সমুদ্র মহড়া দেখে লেবানন সরকার বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশ একটি সক্ষম জাতি। জাতিসংঘের পাশাপাশি লেবানন সরকারও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কার্যক্রমে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

Post a Comment

Previous Post Next Post