হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার ফাঁসি চান নুসরাতের মা

অনলাইন ডেস্কঃ নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামির ফাঁসি চায় নুসরাতের পরিবার। সেই সঙ্গে এ মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, আমরা শুনেছি মামলার চার্জশিটে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর মাকছুদ আলমসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেবে পিবিআই।

পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা নুসরাতকে বোনের মতো ভেবে নিরসলভাবে কাজ করেছেন। কম সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে গ্রেফতার করে নজির সৃষ্টি করেছে পিবিআই।

কোনো ধরনের হুমকি কিংবা চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, অনেক ধরনের হুমকি আসে। তবে আমরা এটাকে আমলে নেই না। যেখানে মেয়েকে হারিয়েছি সেখানে নিজেরা বেঁচে থেকে কি করব। যেখানে নুসরাত হত্যার বিচারের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়েছেন, সেখানে আমাদের মেরে ফেললেও কোনো সমস্যা নেই। এ সময় তিনি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

শিরিন আক্তার আরও বলেন, ২৭ মার্চ নুসরাতকে শ্লীলতাহানির পর রাস্তায় নিরাপত্তা দিয়েছি। ১ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা সেজন্য রাস্তায় কেউ যাতে সমস্যা করতে না পারে সেজন্য রাস্তায় আমার ছেলেরা ছিল। কিন্তু মাদরাসা তো নিরাপদ। সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে তা কোনো দিন কল্পনাও করিনি।

নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, দ্রুত মামলার চার্জশিট দিতে গিয়ে যাতে কোনো আসামি বাদ পড়ে না যায় পিবিআইকে সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানাই। তবে পিবিআইয়ের কার্যক্রমে আমরা সন্তুষ্ট। মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করে আমার বোনের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফেনী পিবিআইয়ের ওসি মো. শাহ আলম বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। বুধবার আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হতে পারে। নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১২ আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো নুসরাতের বাড়িতে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে। পুলিশের চার সদস্যের একটি দল নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তায় রয়েছেন।

southeast

সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য সোলায়মান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। নুসরাতের ওপর বর্বরোচিত এ ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই আমরাও।

নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত।

এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। -
জাগো নিউজ

Post a Comment

Previous Post Next Post