নিহত ৩ বাংলাদেশির স্বপ্ন পূরণে স্বজনদের প্রয়াস

নিহত ৩ বাংলাদেশির স্বপ্ন পূরণে স্বজনদের প্রয়াস


অনলাইন ডেস্কঃ দু’বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ংকর জঙ্গি হামলার ঘটনায় নিহত ২০ জনের মধ্যে তিনজন ছিলেন বাংলাদেশি।

তারা হলেন অবিন্তা কবির, ফারাজ আইয়াজ হোসেন এবং ইশরাত আখন্দ। বাংলাদেশকে ঘিরে তাদের স্বপ্ন ছিল অনেক। কিন্তু অকালে তাদের তরুণ-তাজা প্রাণ ঝরে পড়ায় সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কিন্তু স্বজনরা তাদের নামে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে ওই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।

স্বজনদের প্রার্থনা, আর যেন হলি আর্টিজান ঘটনার মতো কোনো ঘটনা না ঘটে। পড়াশোনা শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত দেশে ফিরে পিছিয়ে পড়া শিশু ও গ্রামের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন অবিন্তা। তার স্বপ্ন ছিল একটি অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করা।

একই ছাদের নিচে তিনি অনাথ শিশু ও সন্তানদের সান্নিধ্যবঞ্চিত বৃদ্ধদের রাখতে চেয়েছিলেন। তাই অবিন্তার স্বপ্নপূরণে গঠন করা হয়েছে ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’। এ ফাউন্ডেশন মূলত শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে।

ফাউন্ডেশনের অধীনে রাজধানীর ভাটারায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন স্কুল। ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, খিলগাঁওয়ের বাসাব আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল।

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সেখানে একটি নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছে। অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর আর্থিক সহায়তা, শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ, বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নানা জনকল্যাণমূলক কাজ করা হচ্ছে।

মা-বাবার একমাত্র সন্তান অবিন্তা কবির (১৮) ছিলেন বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক। বাবা এহসানুল কবির যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। মা রুবা আহমেদ এলিগ্যান্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান। আমেরিকার ইমোরি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন অবিন্তা।

মাত্র তিন দিন আগে ছুটিতে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ইফতারের পর হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অবিন্তা, ফারাজ ও তারিশি।

তিন বন্ধুর মধ্যে তারিশি ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। এলিগ্যান্ট গ্রুপের জিএম কর্নেল (অব.) আবদুল্লাহ হিল শামীম যুগান্তরকে জানান, বাংলাদেশকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন ছিল অবিন্তার। সেই স্বপ্নপূরণেই স্বজনদের এ প্রয়াস।

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন (২০)। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন তিনি। মা সিমিন হোসেন ও বড় ভাই যারেফ আইয়াজ হোসেনও ট্রান্সকম গ্রুপের উচ্চপর্যায়ে কর্মরত।

বাবা ওয়াকার হোসেন একজন ব্যবসায়ী। রাজধানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ২০১৪ সালে ‘এ লেভেল’ পাসের পর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্যে আমেরিকায় যান। গ্রীষ্মের ছুটিতে ২০১৬ সালের ১৮ মে ঢাকায় আসেন তিনি।

ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক ফখরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, কর্পোরেট জগতে অবদান রেখে দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন ছিল তার।

ফারাজ প্রায়ই বলতেন, ‘আমি বড় হয়ে নানাভাইয়ের মতো হব। বিশাল কর্পোরেট হাউস গড়ে তুলব।’ তার স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা ‘ফারাজ ফাউন্ডেশন নামে’ একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি। এরই মধ্যে ওই ফাউন্ডেশনে সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানা উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজ করা হচ্ছে। খেলাধুলার প্রতি ভীষণ অনুরাগ ছিল ফারাজের। তিনি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ভলিবল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন।

ইশরাত আখন্দ (৪২) ছিলেন তিন ভাইয়ের একমাত্র বোন। পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য হওয়ায় সবার আদরের ছিলেন ইশরাত।

ইশরাতের ভাই আবদুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ যুগান্তরকে বলেন, সদা হাস্যোজ্বল ইশরাতের ব্রত ছিল দিনে অন্তত একটি ভালো কাজ করা। বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশি শিল্পী ও শিল্পকে প্রচার করা ছিল ইশরাতের অন্যতম লক্ষ্য। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ, বিশেষ করে গার্মেন্ট কর্মীদের প্রতি ইশরাতের দরদ ছিল অনেক বেশি। আমরা নানাভাবে তার স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করছি।

Post a Comment

Previous Post Next Post